ROSHNI AND JYOTI SING PANDEY
আজ দুই মহিলা ডাক্তারের মৃত্যু নিয়ে কিছু লিখব বলে কলম ধরেছি ।রোশনি আর জ্যোতি নাম দুটির মধ্যে যেন মিল, তেমনি মিল তাঁদের পেষায়,তাঁরা দুজনেই ডাক্তার । মৃত্যুর অন্ধকার মুছে প্রাণের প্রদীপ জ্বালাবে বলেই যাদের জন্ম হয়েছিল । ধর্ষণের পৈশাচিক পরিণতি এদের মৃত্যু হলেও এদের মৃত্যু হাজার হাজার নারীর মনে আত্মবিশ্বাসের প্রদীপ জ্বালিয়েছে । কয়েক লক্ষ্য বছরের ব্যবধান হলেও তাঁদের মৃত্যু আমাদের কাছে বহু প্রশ্ন রেখে গেছে । তারই উত্তর খুঁজব আজ । আমরা জানি রামের বনবাসে যাওয়ার পেছনে মন্থরা নামে এক দাসীর ষড়যন্ত্রই একমাত্র কারণ ছিলো, কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু আপনারা কি জানেন মন্থরার রামের প্রতি এত ক্ষোভ ছিল কেন ? রামায়ণে মন্থরা যাকে আমরা রামের বিমাতা কৈকেয়ির দাসী হিসেবে জানি, তিনি আসলে ছিলেন সেই সময়ের সপ্ত সিন্ধুর সব থেকে ধনী ব্যবসায়ী, যার একদিনের রোজগার ছিলো অযোধ্যার বার্ষিক রোজগারের সমান। অর্থাৎ তিনি রাজার থেকেও ধনী ছিলেন । এ মন্থরার একমাত্র মেয়ে ছিলেন রশনি । রশনি নিজে একজন ডাক্তার ছিলেন এবং একটা হাসপাতাল চালাতেন । মাঝে মাঝেই রশনি নিজের হাসপাতালের মহিলা ডাক্তারদের টিম নিয়ে দূর দূরে গ্রামে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে যেতেন । অসামান্য সুন্দরী ব্যক্তিত্বময়ী রাম লক্ষ্মণের রাখী বোন রোশনি একদিন অযোধ্যা থেকে দুঘণ্টা দূরে এক গ্রামে তাঁর মেডিকেল টিম নিয়ে চিকিৎসা করতে যান । সেই সময় তারকাছে আসেন পাশের গ্রামের প্রধানের ছেলে ধেনুকা । রূপবতী রোশনির রূপ দেখে ধনুকা পাগল হয়ে যায় । সেদিন রোশনিদের বেশ রাত হয়ে গেছল । গ্রামের প্রধান বলেছিলেন রাতটা গ্রামেই কাটিয়ে যেতে, কিন্তু রোশনিকে সেই রাতেই যে পোছাতে হবে অযোধ্যায় । রোশনিরা বেরিয়ে গেলে তাঁর খোঁজে আসে ধেনুকা । পরের দিন সরযূ নদীর ধারে ধর্ষিতা ক্ষতবিক্ষত রশনি ও তাঁর মহিলা ডাক্তারদের দেহ পাওয়া যায় । সাক্ষ্য প্রমাণ সব কিছু মাথায় রেখে ধেনুকা ও তাঁর তিন সাথিকে গ্রেফতার করা হয় । সেই সময় অযোধ্যার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার দশরথ তাঁর বড় ছেলেকে দিয়েছিলেন । ধনুকা যেহেতু নাবাল ছিলেন তাই রামচন্দ্র তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন নি, তাঁকে মুক্তি দিয়েছিলেন । কারণ সেই সময়ের আইনেও নাবালক ধর্ষকের কোন শাস্তির বিধান ছিল না । রামচন্দ্র তাঁকে মুক্তি দিলেও ভরত কিন্তু দেন নি । ভরত রোশনির ধর্ষককে রাতের অন্ধকারে হত্যা করেছিলেন । সেই জায়গাতেই হত্যা করেছিলেন যেখানে রোশনিকে ধেনুকা হত্যা করেছিল । ধেনুকার মৃত্যু কিন্তু সহজে হয় নি, সে মৃত্যু ছিলো ভয়ঙ্কর । ভরত তাঁর গলার নিচে ফুটো করে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল , সেই অ্যাসিড ধীরে ধীরে রক্তে মিশে এক ভয়ঙ্কর মৃত্যু ডেকে এনেছিল । এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, ধেনুকার মৃত্যুতে রাম ছাড়া কারুর কোন দুঃখ হয় নি । তাঁর গ্রামের মেয়েরা এই খবর শুনে উৎসব করেছিলেন ।ধেনুকা নাবালক হলেও সে কোন বয়স মানত না, যে ছেলেটি ধর্ষণের মতন অপরাধ ধরতে পারে তাঁকে কখনই আমি মানসিক ভাবে শিশু বলব মা , সে এক ভয়ঙ্কর পশুর সমান । আমি তো শুনেছি দিল্লির জ্যোতি সিংপান্ডে হত্যা মামলায় যে ছেলেটিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সে ছেলেটি জ্যোতিকে ধর্ষণ করে ওর যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দিয়েছিল । সেই সময়ের মহামান্য মুসলিম বিচারপতি এই নৃশংস খুনিটিকে শুধুমাত্র ধর্ম ভাই বলে কোন রকম বিচার না করে হোমে পাঠিয়ে দিলেন !!!!! রামায়ণর যুগ পার করে এসেছি কয়েক লক্ষ বছর হয়ে গেল, কিন্তু না আইনের কোন পরিবর্তন হয়েছে না বিচারকের মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়েছে । কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রে বিষ কন্যার কথা পড়েছি রাজারা নিজেদের শত্রুকে হত্যা করার জন্য বিষকন্যা তৈরি করতেন । এখন তো মনে হচ্ছে আমাদের আত্মরক্ষার তাগিদে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের কন্যাদের বিষকন্যায় পরিণত করতে হবে ।
Comments
Post a Comment