নারী তুমি অর্ধেক আকাশ পর্ব ১

নারী তুমি অর্ধেক আকাশ পর্ব ১ 
দেবশ্রী চক্রবর্তী 
আমি এমন এক পরিবারে জন্মে ছিলাম যেখানে কন্যা সন্তানের জন্মকে অশুভ বলে মনে করা হয়, যেখানে একজন কন্যা সন্তানকে তার পরিবারের ওপর বোঝা বলে মনে করা হয়, আমি এমন এক পরিবারে জন্মেছিলাম যেখানে একটি মেয়ের জন্মের পরই চিন্তা করা হয় কবে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে অন্যের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে । আমি যে পরিবারে জন্মেছি যেখানে একই বাড়িতে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মধ্যে বেড়ে ওঠার আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকে । ভালো খাবার, খাঁটি দুধ সব কিছু বরাদ্দ থাকে ছেলেটির জন্য, মেয়েটিকে বড় হতে হয় জল মেশান দুধ খেয়ে । মেয়েটিকে পড়তে হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর ছেলে হলে তাকে পাঠান হয় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে । আমার বলতে লজ্জা নেই আমি এমন এক পরিবারে জন্মেছিলাম যেখানে একজন নাড়ীকে ভোগ্য পণ্য ছাড়া আর কিছুই মনে করা হয় না । যেখানে এক কন্যা সন্তানে শৈশব ক্ষত বিক্ষত হয় চামড়ার বেল্টের আঘাতে । সেই ক্ষতের যন্ত্রণাই ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর প্রতিবাদের রূপ নেয় এই সমাজের বিরুদ্ধে । আমার যখন মেয়ে হয়েছিল, তখন আমার শ্বাশুরি শাঁখ বাজিয়ে সবাইকে জানিয়েছিলেন তার ঘরে লক্ষ্মী এসেছে, আমার শ্বশুর মশাই সোনার চেন দিয়ে নাতনীর মুখ দেখেছিলেন । আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই কে দেখে সে দিন বুঝেছিলাম মেয়ের জন্ম কতটা আনন্দের হতে পারে ।
সারা বাড়ি যখন আনন্দে মেতে উঠেছে, তখন আমার ঠাকুরদা এসে আমাকে বলেছিলেন, “মায়ের মতন মেয়ে বিয়ানি হয়েছিস । “ আমার শ্বাশুরিকে বলেছিলেন আপনার ঘরে একটা খুঁটি এলো । সে দিন আমার শ্বাশুরি যোগ্য উত্তর ওনাকে দিয়েছিলেন । উনি বলেছিলেন, “ হ্যা, আপনি ঠিকই বলেছেন আমার নাতনী খুঁটি । খুঁটির ওপরই দাঁড়িয়ে থাকে একটা পরিবার । ভদ্রলোক সারা জীবন নারীদের ঘৃণা করে এসেছেন । কিন্তু উনি একটা কথা বুঝতেন না যে মায়ের গর্ভ থেকে ওনার জন্ম তিনি একজন নারী , যে স্ত্রী ওনার দুই পুত্র সন্তানের জননী তিনিও একজন নারী । আমি একজন নারী হিসাবে গর্ব বোধ করি, আমার মেয়ের জন্যও আমার গর্ব বোধ হয় । আজ আমি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব প্রাচীন যুগে নারীর স্থান । 
এই বিশ্বে যে কোন মহৎ সৃষ্টির পিছনে নারীদের অবদান রয়েছে,তা অনস্বিকার্য।তাই নারীওদের কে বাদ দিয়ে কোন শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলোচনা পরিপূর্ণ হতে পারেনা।সাধারনত ধর্ম বলতে আমরা হিন্দু সনাতন,বৌদ্ধ,খৃষ্টান,ইসলাম,শিখ,জৈন প্রভৃতি কে বুঝি।কিন্তু এই সব প্রত্যেক ধর্মের ধর্মগ্রন্থ গুলি যদি দেখা যায় ,সেখানেও প্রাক্- প্রাচীন কাল থেকে নারী শিক্ষার প্রভাব সুস্পষ্ট।বিশ্বের সমগ্র ধর্মগ্রন্থ গুলিতে নারী জাতীকে বিশেষ ভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক দের মতে প্রাচীনকালে বন্য পরিবেশে নারী-পুরুষ একত্রে বসবাস করতো।এদের বন্য পরিবেশে জীবন যাপন বন্য পশুর মতো ছিলো।তারা বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো,ফলমূল,গাছের পাতা ও পশুর কাঁচা মাংস খেতো।এই বন্য পরিবেশেও নারী দের ভূমিকা ছিলো পুরুষ দের সমান।তাহারা দল বেঁধে বাস করত।তাই পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও পশু শিকার,ফলমূল সংগ্রহ,সন্তান প্রস্বব ও লালন পালন এবং নিজেদের আত্মরোক্ষা করত। যুগ যুগ ধরেই মায়েদের ক্ষমতার ও সাহসিকতার বলেই সন্তানেরা স্বতঃস্ফুত্ব ভাবে চলাফেরা করতে পারে। কি উপায়ে শত্রু পক্ষ্য কে হারিয়ে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে থাকা যায়,তা শিশুরা মায়েদের কাছথেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রস্তর যুগেও নারীর স্থান ছিলো সবার উপরে।আমরা যদি ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে তাকাই,তবে দেখব যে নারী পরুষ উভয়েই মিলিত হয়ে পাথরের অস্ত্র তৈরী করতো।তাছাড়া গুহায় বসবাস কালে আদিম মানুষের অঙ্কিত অনেক গুহা চিত্র দেখা যায়,যেখানে নারীরা পশু শিকার করছে,আত্মরক্ষা করছে,সন্তান সন্ততি দের কে নানা বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছে।সুতরাং এই সময় নারীর ক্ষমতা ও বিচার বুদ্ধি ছিলো পুরুষদের সমপর্যায়ে। এই কথা আমরা সকলে অবগত যে,সুমেরীয় সভ্যতা ছিল প্রাচীন একটি সভ্যতা।পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতা ছিল একটি অন্যতম সভ্যতা।সুমেরীয় সভ্যতা ছিল মূলত কৃষি ভিত্তিক।কৃষিকাজে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমান তালে তাল রেখে অংশ গ্রহণ করত।ফসল ফলাবার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জল নিকাষী ব্যবস্থা,চাষের জমি তৈরী,কৃষিকাজ,গৃহ নির্মানে পু্রুষদের পাশাপাশি নারীরদের ভূমিকার অনেক প্রমান ইতিহাসে পাওয়া গেছে।
সুমেরীয় সভ্যতার মত মিশরীয় সভ্যতা ছিল পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে অন্যতম।মিশরীয় সভ্যতায় “মেন কাউরে,খাফরে,খুফু,টুটেন খামেন,দ্বিতীয় রামেসে,নারমার মেনেস,হামমুরারি” প্রভিতি মহারাজাদের নাম যেমন পাওয়া যায় তেমনি “ফারাও খূফুর মা হেতেপ হারেস,রানী নেফারটিটি”প্রভিতি বিদূষি । মহিলাদের নাম ও পাওয়া যায়।নারীদের মধ্যে রানী নেফারটিটির ভূমিকা চীরস্বরনীয়।
মিশরীয় ইতিহাসে রানী নেফারটিটি রাজকার্যের গুরুত্বপূ্র্ণ সিন্ধান্ত গুলি অন্যদের সাথে নিতেন এবং কখনো কখনো রাজা চতুর্থ আমেন হোটপের সাথে রাজকার্যে অংশ গ্রহণও করতেন।আবার কখন,নেফারটিটি বীরঙ্গনাদের মতযুদ্ধে গদা নিয়ে যুদ্ধ করতেন।মিশরীয় দেওয়াল চিত্রে দেখাযায় রানী নেফারটিটি চিত্র কলায় ব্যস্ত রয়েছেন।গ্রীস সভ্যতার ইতিহাসে জানা যায় যে সেই সময় মহিলারা বিভিন্ন চিত্রকলা,স্থাপত্য বিদ্যা ও ভাস্কার্যে পুরুষদের পাশাপাশি অংশ গ্রহণ করতেন।তাছাড়া গ্রীক স্থাপত্য কলাতে যেসব দেওয়াল চিত্র পাওয়া যায় সেখানে দেখাযায় নারী নেফারটিটি বিভিন্ন কাজে কর্মরত। 
প্রাচীন ভারতে নারীর স্থান নিয়ে বিতর্ক আছে । সাধারণভাবে বলা হয় বৈদিক যুগে নারীর স্থান ছিল খুব উপরে । পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কন্যাসন্তানের জন্ম অনভিপ্রেত হলেও তার যত্ন ও লালনপালনে কোনো ত্রুটি থাকত না । তার শিক্ষার দিকে যথেষ্ট নজর দেওয়া হত । ঘোষ, অপালা, বিশ্ববারার মতো নারীরা বৈদিক শ্লোক রচনা করেছিলেন । উপনিষদের যুগে গার্গীর মতো দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটেছিল । তিনি যাজ্ঞবল্ক্যের মতো পণ্ডিতের সঙ্গে বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছিলেন । উচ্চবর্ণের মহিলারা তাঁদের স্বামীর সঙ্গে যাগযজ্ঞে অংশ নিতেন । তাঁরা সম্পত্তির অধিকারিণীও ছিলেন এবং স্বামীর মৃত্যুর পর ইচ্ছা করলে পুনর্বিবাহ করতে পারতেন । কিন্তু বৈদিকযুগে, বিশেষত পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থা যে সবটাই ভাল ছিল তা নয় । ক্রমে সমাজে শূদ্র ও নারীদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল । নারীকে বলা হত ‘ভার্ষা’; অর্থাৎ, ভরণীয়া বা যাকে ভরণ করতে হয় । তার স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না । শিশুকালে সে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বয়সকালে বা বৈধব্য জীবনে পুত্রের অধীন । পুরুষদের মধ্যে বহু বিবাহ প্রচলিত থাকলেও নারীদের মধ্যে তা ছিল না । স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি অনুগত থাকতে হত । অথর্ব বেদে অবশ্য নারীদের বহুবিবাহের কথা উল্লেখ আছে । ঋকবৈদিক যুগে বিবাহ নারীর পক্ষে বাধ্যতা মূলক নাহলেও পরে তা হয়েছিল । এই সময়ে সতীদাহ প্রথা চালু ছিল না । বিধবা বিবাহ প্রচলন ছিল তা সে দেওরের সঙ্গেই হোক, বা অন্য কারও সঙ্গে । অথর্ব বেদের যুগে সহমরণ বা সতীদাহের কথা জানা যায় । বিবাহে কন্যাপণের কথাও জানা যায় । ঋক্‌বৈদিক যুগের গোড়ায় নারী গৃহে আবদ্ধ থাকত না; এমনকি মুদগলিনী, বিশপলা, শশিয়সী প্রভৃতি নারীর নাম পাই, তাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন । কিন্তু পরে ক্রমশ নারীর স্থান হয়েছিল অন্তঃপুরে । পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়াই ছিল তার প্রধান কাজ । নিঃসন্তান বা শুধু কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়া নারীকে পরিত্যাগ করার অধিকার তার স্বামীর ছিল । সেক্ষেত্রে স্বামী আবার বিবাহ করতে পারত । নারীর যৌন অপরাধের কোনো ক্ষমা ছিল না । কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে তা প্রশ্রয় পেত । নারীর মন বলে কিছু আছে, তা মনে করা হত না, এমনকি তাকে মারধোর করবার অধিকার তার স্বামীর ছিল । এক কথায় বলা যায়, প্রাচীন যুগে ‘নারীস্বাধীনতা’ ছিল বলে অনেকের যে ধারণা আছে, তা অনেকাংশে ভ্রান্ত বলে মনে করা হয় । নারী ছিল পুরোপুরি পুরুষের অধীন এবং তারই “সম্পত্তি” । বেদ পরবর্তী যুগে নারীর অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটেছে । বৌধায়নের ‘ধর্মশাস্ত্রে’, মনু প্রভৃতি স্মৃতিশাস্ত্রকারদের রচনা, কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’, বাৎসায়নের‘ কামসূত্র’, কালিদাসের বিভিন্ন নাটক, বাণভট্টের ‘কাদম্বরী’ ও ‘হর্ষচরিত’, হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্নাবলী’, মাঘের ‘শিশুপালবধ’, দন্ডির‘দশকুমারচরিত’, শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিক’, কলহনের ‘রাজতরঙ্গিণী’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে নারীর দুরাবস্থার কথা জানতে পারা যায় । পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র পূত্রের মাতা । তার কোনো স্বাধীনতা ছিল না । স্বয়ংবর ও গান্ধর্ব বিবাহ পদ্ধতি ক্রমশ অপ্রচলিত হয়ে পড়ে এবং আর্য ও আসুর বিবাহ প্রথা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । বিধবা বিবাহ ক্রমশ উঠে যেতে থাকে এবং জীবনের বাকি অংশ তারা শোক এবং কৃচ্ছ্র সাধনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে থাকে । তবে পর্দাপ্রথা ছিল না । নারীরা উৎসব এবং খেলাধূলায় অংশ গ্রহণ করতে পারত । হর্ষবর্ধনের সময় (সপ্তম শতকে) সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল । শিক্ষাদীক্ষা উচ্চবর্ণের নারীদের মধ্যে সীমিত হয়ে যায় । তাদের বেদপাঠ নিষিদ্ধ হয় । সমাজে একমাত্র পতিতারাই শিক্ষিতা এবং স্বাধীন ছিল । তবে বৌদ্ধ ও জৈন পরিবারের মেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল । সাহিত্যে অবশ্য নারীকে প্রেমিকা রূপে দেখানো হয়েছিল । কলহন রক্ষণশীল ও নারী স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন । আবার এইযুগে লীলাবতী ও খনার মতো বিদূষী মহিলারও সাক্ষাৎ মেলে । নারী স্বাধীনতা না থাকলেও তাদের যথেষ্ঠ সন্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হত । স্বামীকে তার সাধ্যমতো স্ত্রীর ভরণপোষণ, বিলাসসামগ্রী, এবং অলংকারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হত । নারীদের তিরস্কার এবং মারধোর করা নিন্দনীয় ছিল । যে সব পুরুষ তাদের স্ত্রীদের মারধোর করে, ঈশ্বর তাদের পূজা গ্রহণ করেন না বলে শাস্ত্রের বিধান ছিল । 
তবে ইতিহাসের ছাত্ররা অনার্স স্তরে গিয়েই জানতে পারেন, সেকালে মোটেই নারীরা সম্মানজনক অবস্থানে ছিলেন না। কয়েকজন বিদূষীর অবস্থান দেখিয়ে সমাজের সামগ্রিক অবস্থাটা বোঝা কখনই সম্ভব নয়। সুকুমারী ভট্টাচার্যের গবেষণা পরতে পরতে উন্মোচন করে প্রাচীন ভারতে নারীর ক্রমাগত অবদমনের ইতিবৃত্তকে, তুলে ধরে নারীর আস্টেস্পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা শৃঙ্খলকে।
প্রাচীন ভারতে নারীর এই অবনমন ও অবদমনকে সবথেকে বেশি মাত্রায় তুলে ধরে ‘চাণক্য নীতি’-র মতো জনপ্রিয় টেক্সট। এই নীতিমালা কৌটিল্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য বিরচিত হোক বা না-হোক, এই টেক্সট যে আবহমান ভারতীয় মননের এক জটিল প্রতিচ্ছবি, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ‘চাণক্য নীতি’-তে মেয়েদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা আজকের দিনে পড়তে বসলে মাথা খারপ হতে বাধ্য।
‘চাণক্য নীতি’ অনুসারে-
* আগুন, জল, নারী, বোকা লোক, সাপ এবং রাজপরিবারকে এড়িয়ে চলাই ভাল। (মুশকিল এখানেই। এই তালিকায় ‘নারী’ অন্তর্ভুক্ত হল কীভাবে?)
* ব্যক্তিগত স্বার্থে অর্থ এবং নারী- দুই বিষয়কেই পরিহার বা পরিত্যাগ করা যেতে পারে। (টাকা আর নারী, চাণক্যের দৃষ্টিতে দুই-ই সমান।)
* এই নীতির একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, যে নারী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়াই উপবাস করেন, তিনি বা তারা স্বামীর আয়ুকে ধ্বংস করেন। (স্বামীর সাপেক্ষ অস্তিত্ব হিসাবেই নারীর অবস্থান।)
* চাণক্য নীতি জানায়- পিতল পরিষ্কার করে ছাই, তামা পরিষ্কার করে তেঁতুল, নারীকে পরিষ্কার করে ঋতুস্রাব, নদীর জলকে পরিষ্কার করে তার গতি।(মোটেই মেয়েদের পক্ষে সম্মানজনক নয় এমন উক্তি।)
* আরও বলা হচ্ছে, ব্যবহার না করলে জ্ঞান নষ্ট হয়, অজ্ঞানতায় পুরুষ নষ্ট হয়, সেনাপতির অভাবে বাহিনী নষ্ট হয় এবং স্বামীর অভাবে নারী নষ্ট হয়। (আবার মেয়েদের স্বাধীন সত্তাকে অস্বীকার।)
* নারীর পরামর্শ গ্রহণ না করতে, নারীর সংস্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ‘চাণক্য নীতি’।
* নারী নাকি বিশ্বস্ত হতেই পারে না।
* নারীর প্রকৃতিতেই নাকি সাতটি ‘দোষ’ আছে- অসত্যভাষণ, নির্বুদ্ধিতা, হঠকারিতা, ছলনা, অর্থলিপ্সা, অপরিচ্ছন্নতা এবং নিষ্ঠুরতা। (এই মন্তব্যের পরে আর কী বাকি থাকে?)
* ‘চাণক্য নীতি’-র উপদেশ- নারীদের চার দেওয়ালের মধ্যেই রাখুন। বাইরে কদাচ নয়।
এই নীতিমালার এরকম পুরুষতান্ত্রিক চেহারার একটাই কারণ। সেটি সেকালের যুগধর্ম। সেই কালই এমনভাবে দেখতে শিখিয়েছিল নারীকে। চাণক্য নীতি’ সেই অধিকাঠামোরই প্রতিফলন।

Comments

Popular Posts