যুদ্ধবালি মাতা তানোট কি জয়

যুদ্ধবালি মাতা তানোট কি জয় 

দেবশ্রী চক্রবর্তী 


দেবী পক্ষের শুরুতেই আজ এমন এক মায়ের কথা লিখতে বসেছি যে মায়ের কথা মনে পড়লে শ্রদ্ধায় চোখে জল এসে যায় । আজ লিখতে বসেছি তানোট মাকে নিয়ে । এক মরুতীর্থে মা হিংলাজ আরেক মরুতীর্থে মা তানোট । সময় ১৯৭১, স্থান রাজস্থানের জয়সালমির থেকে ১৫৩ কিলোমিটার দূরে ভারত পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত একটা ছোট্ট গ্রাম তানোট , এই গ্রামকে অধিকার করে নিতে পারলে রামপুর পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমানার অন্তর্ভুক্ত করা যাবে । ১৯৭১ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে তানোট একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা । এই সেই যুদ্ধ যে যুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার শাহেনাওয়াজ খান স্বপ্ন দেখেছিলেন জয়সালমিরে জলখাবার, যোধপুরে মধ্যাহ্ন ভোজন আর দিল্লিতে রাতের খাবার খাবেন । এক দিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে পরা কিছুতেই মেনে নিতে পারে নি পাকিস্তান, তারা প্রতিশোধের জ্বালায় উন্মাদ হয়ে উঠেছিল । তিন দিক থেকে পাকিস্তানি ট্যাঙ্ক আক্রমণ করে তানোট । মাঝখানে পরে দেবী মাতার মন্দির , এই মন্দিরকে ধ্বংস করতে পারলে তানোট তাঁদের হাতের মুঠোয় । তিন দিন ধরে চলে গোলাগুলি, কিন্তু মন্দিরের একটা ইটও ভাঙতে পারলেন না পাক বাহিনী, যেন তেন প্রকারেণ মন্দিরকে ধ্বংস করতেই হবে, ব্রিগেডিয়ার খানের নির্দেশে তিন হাজার বোম ফেলা হয় মন্দিরে, সেই বোম গুলোর একটাও ফাটে নি সে দিন । আজ ৫৫ বছর পরও তা অক্ষত অবস্থায় সাজান আছে তানোট মায়ের মন্দিরে । এর মধ্যে একটাও যদি ফাটে পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, কিন্তু ৫৫ বছর তারা নীরব । আমার কথা বিশ্বাস না হলে একবার ঘুরে আসুন রাজস্থানের জয়সলমের জেলায় রয়েছে তানোট মাতা মন্দিরে। ১৯৭১ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ চলছিল, বোমা পড়ে রাজস্থানের এই মন্দিরকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। মন্দিরটিকে লক্ষ্য করে পাকিস্তান একের পর এক বোমা ছুঁড়লেও মন্দিরের একটি পাথরও ভাঙতে পারেনি। এমনকী, একটি বোমাও ফাটেনি। যেমনকার তেমনই অক্ষত রয়ে গেছে মন্দির।তানোট মাতা মন্দিরের এই ইতিহাস শুনে আজও মানুষ চমকে ওঠে। কেমন করে বোমা আক্রমণের পরও এই মন্দির অক্ষত তা মানুষের কাছে অজানা রয়ে গেছে। যদিও এই মন্দিরে পাকিস্তানের আক্রমণের পাশাপাশি নানা পৌরাণিক কাহিনিও শোনা যায়। পৌরাণিক চরণ সাহিত্যেও উল্লিখিত তানোট মাতার মন্দিরের কথা। হিংলাজ মাতারই অন্য আরেক রূপ চরণ মাতা। পরবর্তীকালে তানোট মাতা করণি মাতা হিসেবে পরিচিত হন। তানোট মাতাকে গডেস অফ চরণ বলেও গণ্য করা হয়। ভারত-পাকিস্তানের বর্ডারে তানোট নামে একটি গ্রাম রয়েছে। সেখানেই রয়েছে এই মন্দিরটি। এই গ্রামের জনসংখ্যাও বেশ কমই। ছোটো এই গ্রামের মূল আকর্ষণ তানোট মন্দির। মন্দিরের ইতিহাসই এই জায়গার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। ভারতবর্ষের অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে এটি একটি। জয়সলমের শহর থেকে ১৫৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই মন্দিরটি।
যুদ্ধ শেষে সেই পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার সাহেনাওয়াজ খান ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে এসেছিলেন মায়ের মন্দিরে, এখানে এসে তিনি মাথা নত করে মায়ের কাছে ক্ষমা চান এবং মাকে রুপোর ছাতা দিয়ে গেছিলেন যা এখনও শোভা পায় পায়ের মাথায় । যে ট্যাঙ্ক গুলো সে দিন মায়ের মন্দিরে আক্রমণ করেছিল সে গুলো একটাও ব্যবহারের যোগ্য আর নেই । প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, ১৯৭১ এর পর এই মন্দিরে কোন পুরোহিত রাখা হয় নি, আমাদের সেনা ভাইরা মায়ের পূজা নিজেরা করেন এবং দর্শনার্থীদের নিজের হাতে প্রসাদ দেন । প্রতি দিন সকাল এবং সন্ধ্যা এ মায়ের পূজা আর আরতি হয় যা দেখার মতন । ভারত আর পাকিস্তানের সেনারা মনে করেন মা স্বয়ং ঐ মন্দিরে আছেন, তাই ১৯৭১ এর যুদ্ধের পর পাকিস্তান ভুলে তানোট অধিকারের স্বপ্ন দেখে নি ।
জয় মাতা তানোট দেবী কি জয় ……।
জয় মাতা চরণ দেবী কি জয় …… ।
আসুন সবাই জেনে নেই মা দুর্গার ১০৮ নাম।
(১) সতী,
(২) সাধ্বী,
(৩) ভবপ্রীতা,
(৪) ভবানী,
(৫)ভবমোচনী,
(৬) আর্য্যা,
(৭) দুর্গা,
(৮) জয়া,
(৯)আদ্যা
(১০) ত্রিনেত্রা,
(১১) শূলধারিণী,
(১২)পিনাকধারিণী,
(১৩) চিত্রা,
(১৪) চন্দ্রঘণ্টা,
(১৫) মহাতপা,
(১৬) মনঃ,
(১৭) বুদ্ধি,
(১৮) অহঙ্কারা,
(১৯) চিত্তরূপা,
(২০) চিতা,
(২১) চিতি,
(২২) সর্বমন্ত্রময়ী,
(২৩) নিত্যা,
(২৪) সত্যানন্দস্বরূপিণী,
(২৫) অনন্তা,
(২৬) ভাবিনী,
(২৭) ভাব্যা,
(২৮) ভব্যা,
(২৯) অভব্যা,
(৩০) সদাগতি,
(৩১) শাম্ভবী,
(৩২) দেবমাতা,
(৩৩) চিন্তা,
(৩৪) রত্নপ্রিয়া,
(৩৫) সর্ববিদ্যা,
(৩৬) দক্ষকন্যা,
(৩৭) দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী,
(৩৮) অপর্ণা,
(৩৯) অনেকবর্ণা,
(৪০) পাটলা,
(৪১) পাটলাবতী,
(৪২) পট্টাম্বরপরিধানা,
(৪৩) কলমঞ্জীররঞ্জিনী,
(৪৪) অমেয়বিক্রমা,
(৪৫) ক্রূরা,
(৪৬) সুন্দরী,
(৪৭) সুরসুন্দরী,
(৪৮) বনদুর্গা,
(৪৯) মাতঙ্গী,
(৫০) মতঙ্গমুনিপূজিতা,
(৫১) ব্রাহ্মী,
(৫২) মাহেশ্বরী,
(৫৩) ঐন্দ্রী,
(৫৪) কৌমারী,
(৫৫) বৈষ্ণবী,
(৫৬) চামুণ্ডা,
(৫৭) বারাহী,
(৫৮) লক্ষ্মী,
(৫৯) পুরুষাকৃতি,
(৬০) বিমলা,
(৬১)উৎকর্ষিণী,
(৬২) জ্ঞানা,
(৬৩) ক্রিয়া,
(৬৪) সত্যা,
(৬৫) বুদ্ধিদা,
(৬৬) বহুলা,
(৬৭) বহুলপ্রেমা,
(৬৮) সর্ববাহনবাহনা,
(৬৯) নিশুম্ভনিশুম্ভহননী,
(৭০)মহিষাসুরমর্দিনী,
(৭১) মধুকৈটভহন্ত্রী,
(৭২) চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী,
(৭৩) সর্বাসুরবিনাশা,
(৭৪) সর্বদানবঘাতিনী,
(৭৫) সর্বশাস্ত্রময়ী,
(৭৬) সত্যা,
(৭৭) সর্বাস্ত্রধারিণী,
(৭৮) অনেকশস্ত্রহস্তা,
(৭৯) অনেকাস্ত্রধারিণী,
(৮০) কুমারী,
(৮১) কন্যা,
(৮২) কৈশোরী,
(৮৩) যুবতী,
(৮৪) যতি,
(৮৫) অপ্রৌঢ়া,
(৮৬) প্রৌঢ়া,
(৮৭) বৃদ্ধমাতা,
(৮৮) বলপ্রদা,
(৮৯) মহোদরী,
(৯০) মুক্তকেশী,
(৯১) ঘোররূপা,
(৯২) মহাবলা,
(৯৩) অগ্নিজ্বালা,
(৯৪) রৌদ্রমুখী,
(৯৫) কালরাত্রি,
(৯৬) তপস্বিনী,
(৯৭) নারায়ণী,
(৯৮) ভদ্রকালী,
(৯৯) বিষ্ণুমায়া,
(১০০) জলোদরী,
(১০১) শিবদূতী,
(১০২) করালী,
(১০৩) অনন্তা,
(১০৪) পরমেশ্বরী,
(১০৫) কাত্যায়নী,
(১০৬) সাবিত্রী,
(১০৭) প্রত্যক্ষা এবং
(১০৮) ব্রহ্মবাদিনী

Comments

Popular Posts