দেবী

দেবী

দেবশ্রী চক্রবর্তী 


ফাটা বেড়ার ফাঁক দিয়ে রাস্তার আলো এসে ঢুকছে ঘরের মধ্যে, ফাটা বেড়ার ছায়া এসে পড়ছে মুখে, মনে হচ্ছে কপালের মাঝখানটা কেউ খাবলে নিয়েছে, মুখটা স্থির নেই , দুটো অস্থির চোখ চেয়ে আছে ফাটা জায়গাটার দিকে, সে বোঝার চেষ্টা করছে আজ কে ! ঝুপড়ির পেছন দিকে আবর্জনার স্থুপ থেকে একটা কুকুর চিৎকার করে উঠল, কানে ক্ষুধার্ত কুকুরের আর্তি  আসতেই মুখটা পেছনের দিকে ঘুরে গেল, একটু একটু করে অস্থির হয়ে উঠছে সে, খুব ঘাম হচ্ছে, অস্থির লাগছে শরীরটা আজ , বেড়ার ফাঁকে কয়েকটা ছায়া মূর্তির নড়াচড়া বন্ধ হতেই খশখশ করে শব্দ হতেই মেয়েটি প্যান্টের দড়ি খুলতে লাগল, ও জানে লেনদেন শেষ হলে এবার বদ্ধ দরজা খুলে যাবে, প্যান্টের দড়ি খোলার সময় কোমরের পোড়া জায়গাটায় প্যান্টের ঘসা লেগে টনটন করে উঠল । মেয়েটির মুখ থেকে আওয়াজ বেরিয়েও বের হল না । অন্ধকার গুমোট ঘরে ড্রেনের গন্ধের সাথে এসে মিশল বিড়ির গন্ধ । মেয়েটি হাত চালিয়ে পাজামাটা হাঁটুর নীচে নামিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই গলগল করে কিছুটা গরম রক্ত বেরিয়ে এলো দু পায়ের মাঝখান থেকে । অন্ধকারে রক্তের রঙ বোঝা যায় না, কিন্তু তাঁর উষ্ণতা প্রতীকের মতন রক্তিম করে তোলে কাঁচা ঘরের মেঝেকে । দরজা ধীরে ধীরে খুলে যেতেই একটা লম্বা দরজার ফাঁক দিয়ে আলো এসে পরে ঘরের ভেতরে , লম্বা আলোর রেখাটা দু ভাগে  ভাগ করে দেয় শ্রুতির সম্পূর্ণ অস্তিত্বাকে । দরজাটা আস্তে আস্তে ফাঁক হয়ে যাচ্ছে, আলোর মাঝে একটা ছায়ামূর্তি, ছায়া মূর্তির মাথার পেছনের চুলটা খাড়া হয়ে আছে , দরজার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে ঘরের ভেতরের ইঁদুর গুলো ছটফট করতে লাগল, বলির আগে যেমন রণ বাদ্য বেজে ওঠে পুকুর পাড়ে থানার কালী মন্দিরে বেজে ওঠে কাঁসর ঘণ্টা, সন্ধ্যা আরতি শুরু হল বোধয় , মাতৃ আরাধনার এ আরেক পদ্ধতি , মেয়েটির চোখে ভেসে ওঠে পুকুরের জলে ভেসে থাকা মায়ের কাঠাম, বিসর্জনের পরের দিন যাকে টেনে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মিলু পালের বাড়ি । কাঠামো গুলো পরে থাকে উঠানে, কত দিন যে এ ভাবে পরে থাকে অবহেলায় কুকুর বেড়াল ডিঙ্গিয়ে যায় তাঁর ওপর দিয়ে, সে নিজেও তো কত ছোঁয়াছুঁয়ি খেলেছে ওই কাঠাম গুলোর ওপর দিয়ে ডিঙ্গিয়ে । কথা গুলো ভাবতেভাবতে কখন ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পাড়ে নি ও । ও কামিজটা খুলে পা ফাঁক করে শুয়ে পড়ল চৌকির ওপর । ঘরের ভেতরে কাঁচা রক্তের গন্ধ পেয়ে মশা গুলো গান শুরু করে দিলো । বেড়ার ফাঁক দিয়ে আলো আসছে সেই আলো এসে পড়ছে মেয়েটির নগ্ন শরীরের ওপর , শয়ে শয়ে  মশা উড়ছে আলো আন্ধারির মধ্যে তাদের মুখে বেজে উঠছে মৃত্যুর গান, লোকটা প্যান্টের বেল্টটা খুলছে, তাঁর আওয়াজ প্রতিমার  কানে আসতেই মনে হল কয়েকটা বেল্টের বারি এসে সপাতে পড়ল ওর পিঠে, যন্ত্রণায় দমবন্ধ করা কোঁক করে একটা আর্তনাদ বেরিয়েও বের হল না ওর মুখ থেকে, বেড়ার বাইরে কিছু লোক ঘোরা ফেরা করছে, বেড়ার ভেতর থেকে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ আসতেই ছায়া গুলো হাসি মুখে নিশ্চিন্তে টাকাটা পকেটে পুড়ে সরে  যায় সেখান থেকে,, কালকের ওষুধটা কাজে এসেছে তা হলে । প্রতিমার মনে পরে যায় মিলু পালের উঠানের মাঝে পরে থাকা কাঠামো গুলোর ওপর কাঁদা মাটি দিয়ে মাতৃ প্রতিমা গড়ার সেই দৃশ্য , পূজার আগে সারা রাত জেগে মিলু তৈরি করত সেই মূর্তি, দুর্গা পূজার ষষ্ঠীর দিন জন্মেছিল বলে ঠাকুমা নাম রেখেছিল প্রতিমা, মায়ের মূর্তি গড়ার দৃশ্য দেখে চোখে জল এসে যেত প্রতিমার, মনে হত ঠাকুমার কথা, মায়ের বোধনের সময় তাঁর জন্ম, তাই সে প্রতিমা, মনটা এক অন্য রকম অনুভূতিতে ভরে উঠত তার, নিজের সৃষ্টিকে দু চোখ ভরে দেখত সে । অনুভব করত নিজের জন্ম রহস্যকে । বার বার মনে হয়েছে  একটা কথা প্রতিমা কেন দুর্গাও তো হতে পারে সে, যে সব দুর্গতি নাশিনী । প্রতিমার তো প্রাণ নেই, তার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলে সে হয় দুর্গা, তাহলে কি তার মধ্যে প্রাণ নেই ! এই একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে তার জীবনের ৭ টা বছর কেটে গেছে । কথা গুলো ভাবতে ভাবতে খুব চাপ অনুভব করল সে দু পায়ের মাঝখানে, কিন্তু কোন আওয়াজ করা যাবে না, আওয়াজ করলে আবার হয় তো পোড়া বিড়ির ছেঁকা । প্রতিমা অনুভব করছে তার বিছানার ছেঁড়া চাদরটা ভেসে যাচ্ছে গরম রক্তে, চাপ যত বাড়ে রক্তের ধারাও তত বেড়ে চলে । প্রতিমা দাঁতে দাঁত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগল মিলু কুমরের প্রতিমা গড়ার সেই দৃশ্য । মিলুর মেয়ে বুড়ি ওর প্রাণের সই, প্রতি বছরই বুড়ির কাছ থেকে প্রতিমা জানতে পারত কবে মায়ের চক্ষুদান হবে । যে রাতে মায়ের চক্ষুদান হয়, সেই সারা রাত প্রতিমার চোখ থেকে গড়িয়ে পরে আনন্দাশ্রু, মনে মনে মিলুর ভক্তিকে অনুভব করে, এক ভক্ত কত শ্রদ্ধা ভক্তি ভরে মায়ের চক্ষুদান করে চলেছেন, প্রতিমা তার মানস চক্ষু দিয়ে দেখতে পায় মিলুর ছেলে কালু প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে, সেই প্রদীপের আলো এসে পড়ছে মায়ের মুখে । তুলির টানে ধীরে ধীরে মায়ের চক্ষুদান হচ্ছে । আনন্দ আর আবেগের এক অদ্ভুত খেলা চলতে থাকে প্রতিমার মনে, সারা ঘরের নিস্তব্ধতা সে অনুভব করে প্রাণ ভরে, এই একচালার ঝুপড়ি ঘরেই তো প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, ভাবতে ভাবতে  কখন সকাল হয়ে যেত । দেখতে দেখতে পূজা এসে যেত, প্রাইমারি স্কুল থেকে এক ছুটে বেরিয়ে ও পৌঁছে যেত মিলুদের বাড়ি । দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখত মায়ের প্রতিমা গুলো দাঁড়িয়ে আছে সারি বদ্ধ ভাবে, কিন্তু তাদের চোখে মুখে বিষণ্ণতা, প্রতিমার মনে হত নিজের বাড়ি ছেড়ে যাবার দুঃখে মা এত বিষণ্ণ । যেখানে তার জন্ম এত দিন কাটান, সেখান থেকে আজ তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্য কোথাও , প্রতিমার চোখেও জল চলে আসত, প্রথম প্রথম কিছু না বুঝলেও ধীরে ধীরে সে বুঝতে পেরেছে মা কেন এত বিষণ্ণ । বড় বড় লড়ি এসে দাঁড়াত কুমর বাড়ির সামনে, সেই লড়িতে তুলে দেওয়া হত মা দুর্গাকে, তার পর মিলু কুমরের হাতে গুনে গুনে দেওয়া হত মূর্তির বিনিময় মূল্য, প্রতিমা অবাক হয়ে চেয়ে থাকত মিলুর প্রসন্ন মুখ খানির দিকে । যে প্রতিমাকে নিজে হাতে গড়ল , সেই হাতে সে তাকে বিক্রি করে পাওনা গণ্ডা বুঝে নিলো । এও কি সম্ভব , নিজের মেয়েকে কেউ বিক্রি করতে পারে নাকি । প্রতিমার কানে এলো কয়েকটা কুকুর পেছনের আবর্জনা সুপে  কামড়া কামড়ি করছে নিজেদের মধ্যে, প্রতিমার বুকে একটা কামড় এসে পড়ল, কিছু ক্ষণের মধ্যে চক চক করে একটা শব্দ হতে লাগল, প্রতিমা অনুভব করল একটা ক্ষুধার্ত কুকুর কামড় বসিয়ে চকচক করে চেটে  খাচ্ছে ওর বুকটা । সারা শরীর  ঘৃণায় ছটফট করে উঠল ওর, চোখের সামনে ভেসে উঠল মহাষ্টমীর অঞ্জলির সেই দৃশ্য, সকলে ভক্তি ভরে অঞ্জলি দিচ্ছে, নিজেদের মনের ইচ্ছে জানাচ্ছে মাকে, ঠাকুর মশাই বুঝে নিচ্ছেন পাওনা গণ্ডা, যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে আর যখন সহ্য হচ্ছে না মেয়েটির , লাখ নিষেধ অমান্য করে সে জড়িয়ে ধরল কুকুরটাকে, পিঠটা হাতড়াতে হাতড়াতে সে খুঁজে পেল পিঠের মাঝ বরাবর একটা  কাঁটা দাগ । এ কাঁটা দাগ তার খুব পরিচিত, অন্ধকারের মাঝে কয়েকটা সাদা কালো ছবি ভেসে উঠল তার চোখের সামনে, শৈশবের সেই পরিচিত কোল, সেই পিঠে চড়ে ঠাকুর দেখতে যাওয়া, ছোট্ট হাতে তুলে দেওয়া কাঁঠি লজেন্স, টোস্ট বিস্কুট সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে ওই কাঁটা দাগটার মধ্যে । শেষ পর্যন্ত এও দেখার ছিল । ছিঃ, ঘেন্নায় শরীরটা অবশ হয়ে আসছিল মেয়েটির । বাবার মিল বন্ধ হয়ে গেলে বাস্তবের ধূসর গোধূলিতে মিলিয়ে যায় প্রতিমার শৈশব, এক দিন স্কুল থেকে এসে ও জানতে পারে আর স্কুলে যাওয়া হবে না ওর, ওর চোখের সামনে ওর একটার পর একটা বই জ্বালানির অভাবে ঢুকতে থাকে উনুনে । এই ভাবেই শুরু ।  রুটি আর ডালের অভাবে রাতের পর রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটতে থাকে । মা রাত হলে বেরিয়ে যেত ঘর থেকে, বাবা আর ভাইয়ের সাথে ঘরে থাকত প্রতিমা, মায়ের নির্দেশে কোন কোন দিন ভাই আর বাবাকে রুটি খাইয়ে শুধু জল খেয়ে শুয়ে পরত ও । এই ভাবেই কাটতে থাকে, মা রাতে বেরিয়ে পড়লেও ভোরে টাকা নিয়ে ফিরত, কিন্তু মাও ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ল , মা আর বেড় হতে পারত না, আবার আরম্ভ হল অনাহারের সেই ভয়ঙ্কর রাত । সেই থেকে শুরু হয় অনাহারে দাঁতে দাঁত দিয়ে রাত্রি যাপন । তারপর এক দিন ওদের বাড়িতে এসে পৌঁছায় ওর মামা । মামাকে দেখে প্রতিমার মুখে হাসি ফোটে, মামা এসে ব্যাগ ভর্তি করে ব্যাজার করে আনে । কত রকম মিষ্টি নিয়ে আসে ব্যাজার থেকে । বহু দিন পর অনাহারে থাকা মানুষ গুলোর মুখে হাসি ফোটে, সন্ধ্যে বেলায় যখন রাস্তার আলো গুলো জ্বলে ওঠে প্রতিমার মনে হয়ে দিওয়ালী আজকে ।  বাবা আর ভাই বেরিয়ে যায় বাজারে, মা মামার জন্য লেবু চা বানিয়ে প্রতিমাকে বলে ঝুপড়ির ভেতরে মামাকে চা দিয়ে আসতে । প্রতিমা চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকে পরে ঝুপড়ির ভেতরে । চায়ের কাপ মামার হাতে দিতেই মামা হাত ধরে বসায় পাশে, গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে তাকাতে থাকে প্রতিমার দিকে । তার পর চা খাওয়া শেষ হলে চায়ের কাপটা রেখে দেয় চৌকির নীচে । মামা প্রতিমার হাতটা চেপে ধরে রাখে, প্রতিমার এই প্রথমবার ভয় করে, ওর খুব ভয় করে, ও মা বলে চিৎকার করতে গেলে মামা ওর ছোট্ট ফুলের মতন ঠোঁটে কামড় বসায় । ছোট্ট দুটো পা ছটফট করে ওঠে, ভাঙ্গা চৌকিতে ক্যাঁচক্যাঁচ করে শব্দ ওঠে । প্রতিমা শুনতে পায় মা বাইরে বসে মামার দেওয়া নতুন রেডিও চালিয়ে গান শুনতে থাকে । এই ভাবেই শুরু , এর পর মামা চলে গেলে আসে পিসেমশাই, মেশোমশাই , পাড়ার দাদা কেউ বাকি থাকেয়ে না, পরিচিত মুখ গুলো হারিয়ে যায় , নির্মম বাস্তবে ভেসে ওঠে কয়েকটা ভয়ঙ্কর মুখোশ । প্রতিবাদের বদলে জুটতে থাকে বিঁড়ির ছ্যাঁকা আর বেল্টের বারি । রঙ্গিন শৈশব হারিয়ে গিয়ে প্রতিমা পরিণত হয় এক যৌনদাসীতে । সম্পর্ক গুলোর প্রকৃত অর্থ সে হারিয়ে ফেলতে থাকে, জীবন পরিণত হয় ভয়ঙ্কর এক পরিহাসে, সব কিছু শেষ হলে মা লেবু চা বানিয়ে পরিবেশন করত , মায়ের চোখে এক ভয়ঙ্কর উদাসীনতা দেখত প্রতিমা, এত কিছুর পরেও মনে হত যেন কিছুই হয় নি, এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু রক্তপাত এক দৈনন্দিন ব্যাপারে পরিণত হয়, বাড়ির লোকেদের উদাসীনতায় হাসপাতাল তো দূরের কথা কোন ওষুধও জোটে নি ওর কপালে । মিলুর মেয়ে বুড়ি ওকে বারবার বলেছে পুলিশের কাছে যেতে, কিন্তু প্রতিমার মনে হয়েছে পুলিশের কাছে গিয়ে কোন লাভ হবে না, নানা রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ও আরেক বার ধর্ষিতা হয়ে যাবে । তার থেকে নিরব থাকাই ভালো । নানা কথা ভাবতে ভাবতে প্রতিমা আবার ফিরে আসে তার ঝুপড়িতে, ওর হাতটা তখনও আটকে ছিল সেই কাঁটা দাগে । বাইরে থেকে মায়ের লেবু চায়ের গন্ধ নাকে আসে , অসুরটা  তখনও খাবলে ধরে রেখেছে ওর বুক । আর সহ্য করা যাচ্ছিল না, এই ভাবে নিজের পরিবারের প্রণামির থালা ভর্তি করে বিসর্জনের দিকে যেতে পাড়ে না এই প্রতিমা, প্রতিমাকে লড়তেই হবে, এ ভাবে আর চলে না, প্রতিমার শরীরে এক ভয়ঙ্কর শক্তি ভর করে, দুর্গা পূজার সময় স্কুল মাঠে ছৌ নৃত্যের সময় সে যে দুর্গা কে দেখেছে সেরকম ভাবে কেঁপে ওঠে ওর শরীর । অসুরটাকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সে মেঝেতে, লোকটা প্রতিমার কোচি শরীরটা নিয়ে এত মোহিত ছিল যে ওকে ফেলতে বেশি সময় লাগে না প্রতিমার । নিজের বালিশের  নীচে একটা চাকু সব সময় রাখত ও, মিলুর মেয়ে বুড়ি ওকে দিয়েছিল সেই চাকু , বুড়ি বলেছিল এটা রেখে দে , কাজে লাগতে পারে । বেড়ার ফাঁক দিয়ে রাস্তার আলো ঘরের মেঝেতে এসে পড়ছে, প্রতিমার দু পায়ের মাঝখান দিয়ে রক্ত ঝড়ে পড়ছে মেঝের ওপর । কাঁচা মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে, লোকটা ওঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না , বারবার মেঝেতে পরে থাকা রক্তে পা পিছলে পরে যাচ্ছে । প্রতিমা হাতে চাকু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে লোকটার বুকের ওপর , লোকটা দু হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে থাকে, কিন্তু অন্ধকারে জ্বলে ওঠে প্রতিমার দুটি চোখ, দুর্গাপূজার ষষ্ঠীর দিন জন্ম ওর, তাই ও প্রতিমা কিন্তু নিজেকে তিলে তিলে জলে ভেসে থাকা কাঠামোতে পরিণত হতে দেবে না ও । অন্ধকারে ছুঁড়িটা চমকে ওঠে । নিমিষের মধ্যে সেই ছুঁড়ির কোপে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় অসুর , বাইরে রেডিওতে গান চলছে, গানের আওয়াজে অসুর নিধনের আর্তনাদ বদ্ধ থেকে যায় ঝুপড়ির চার দেওয়ালের মাঝে । সব শেষ হলে দরজা খুলে প্রতিমা বেরিয়ে আসে ঘর থেকে, প্রতিমার মা দেখে মেয়ের সারা শরীরে রক্ত,হাতে রক্ত লেগে থাকা ছুঁড়ি দেখে সে ঝুপড়ির ভেতরে গিয়ে ঢোকে, প্রতিমা শুনতে পায় তার মায়ের আর্তনাদ, রাক্ষুশি নিজের কাকাকে খেলি !!!!!!! প্রতিমার মা মেয়েকে ধরবার জন্য বাইরে গিয়ে  দেখে মেয়ে ঝুপড়ির বাইরে নেই, পুকুরে ঝপ করে একটা শব্দ হয়, মা গিয়ে দেখে রক্তাক্ত ছুঁড়ি পরে আছে পুকুর ধারে । পরের দিন মহালয়া, রেডিয়োতে বিজ্ঞাপণে মহালয়া বেজে ওঠে 

“ইয়া দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু জাতিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু লজ্জারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শ্রদ্ধারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু কান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মীরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু বৃত্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু স্মৃতিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু তুষ্টিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু ভ্রান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
ইন্দ্রিয়ানামধিষ্ঠাত্রী ভূতানাং চাখিলেষু ইয়া
ভূতেষু সততং তসৈ ব্যাপ্তৈ দেব্যৈ নমো নমঃ।।
চিতিরূপেণ ইয়া কৃৎস্নমেতদ্‌ ব্যাপ্য স্থিতা জগত।

নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।” 

Comments

Popular Posts