DHORSHOK ER JANMO PARIBAR E

বর্তমান ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবীর সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে "ধর্ষণ"। রোজ সকালে চায়ে চুমুক দিয়ে নতুন খবরের খোঁজে যখন আমরা খবরের কাগজ খুলে বসি কোন না কোন পাতায় এই শব্দটি হেডলাইনে এক বা একাধিক বার আমরা দেখতে পাই ।

"ধর্ষণ" শব্দটা এখন যেন আমাদের কাছে কিরকম যেন জলভাতের মতন হয়ে গেছে । মনে হয় এ আর কি এ তো রোজই হচ্ছে কোথাও না কোথাও । আজ হচ্ছে , কালও হবে , এটা আর কি । এসব ভেবে আমরা গৃহিণীরা দৈনন্দিন কাজে মন দিই, মেয়েকে রোজ স্কুলে পাঠাই সময় মতন । মাঝে মধ্যে কোথাও মোমবাতি মিছিল বের হলে কিংবা বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ মিছিল বারকরলে তখন সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবি । কিন্তু আমরা কি কোন দিন ভেবে দেখেছি এই দুর্ঘটনা আমাদের সাথে কিংবা পরিবারের যে কোন বয়সী মহিলা সদস্যের সঙ্গেই হতে পারে  । তখন কি পারব আমরা সেই ভয়ঙ্কর ক্ষতকে ভুলে গিয়ে নিত্যকার কাজে মন দিতে । যে ধর্ষিতা হয় সেই শুধু জানে সে অপমান আর ক্ষতের যন্ত্রণা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে ।

আমার মনে হয়  "ধর্ষণ" যুগ যুগান্তর ধরে চলমান এক স্রোত । মানুষ যখন গুহায় বাসকরত , সেই সময় পারিবারিক বন্ধন ছিল না । সেই সময় পুরুষ নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হত । নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যখন, তখন তো তা ধর্ষণ ই । । নারী বাধা দিলে তাকে মাথা ফাটিয়ে হাতে পায়ে বেরি পরিয়ে তাকে ধর্ষণ করত পুরুষ । সেই অসন্মানের স্মৃতি আমরা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি সিঁথিতে সিঁদুর আর হাতে নোয়া পরে । বিয়ের পর আমরা হাতের নোয়া আর মাথায় সিঁদুর পরি, কারণ টা খুঁব পরিষ্কার । এখন থেকে আমি এক পুরুষের হাতে বন্দি হলাম , আমাকে ইচ্ছে মতন সে ধর্ষণ করতে পারে । আমি জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেকেই আমাকে তেড়ে আসবেন । বলবেন, এ কি কথা বলছেন আপনি ? বিয়ে মানেই ধর্ষণ ? মেয়েরা বুঝঝি সেক্সটা এঞ্জয় করে না ? আমি বলব কেন করে না নিশ্চয় করে, শারিরীক সুখ এঞ্জয় করার সঙ্গে আবেগ অনুভূতি গুলো কতটা কাজ করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ । একটু বুঝিয়ে বললে পাঠকের কাছে ব্যাপারটা অনেকটা পরিষ্কার হবে । একজন স্বামী অতি সোহাগে যদি তাঁর স্ত্রীকে কাছে টেনে নেয় তখন সেই স্ত্রী এই মিলনকে এঞ্জয় করবে ।কিন্তু জোর জবরদস্তি করে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ তাকে সঙ্গমে বাধ্য করলে তা সে কখনই এঞ্জয় করে না । এ তো এক কথায় "ধর্ষণ" ই । খুব কম দম্পতি আছেন যেখানে স্বামী শারীরিক মিলনের সময় তাঁর স্ত্রীর ইচ্ছে গুলোর মূল্য দেয় । এক্ষেত্রে আমার মনে হয় ডি.এন.এ গুলোতে পুরুষের সেই গুহাবাসী পূর্ব পুরুষদের প্রবৃত্তি গুলো ছিটে ফোটা হলেও রয়ে গেছে ।

আমরা যতই ব্যাপার টা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করি না কেন , "ধর্ষণ" এর স্রোত কিন্তু আমাদের পরিবার গুলোর মধ্যেও বয়ে চলেছে । একটা পরিসংখ্যানের মধ্যে দেখা গেছে  যে পৃথিবীতে এমন একটা মেয়েও অবশিষ্ট নেই যে কোন না কোন সময় তাঁর পরিবারের খুব কাছের কোন মানুষের দ্বারা ধর্ষিতা হয় নি । এই প্রসঙ্গে আমি কয়েকটা ঘটনা পাঠকের সামনে তুলে ধরব । শুধু চরিত্র এবং স্থান গুলোর পরিবর্তন করব ।



১. ১৯৯৩ সালের কথা, উত্তর ২৪ প: কোন একটি জায়গার কথা বলছি । রুমা রায় নামে এক মহিলা তাঁর ১৩ বছরের মেয়েকে নিজের স্বামীর কাছে রেখে বাপের বাড়ী গিয়েছিল বাচ্চা হতে । মেয়ের স্কুলের পরীক্ষা চলছিল , তাই সে বাবার কাছে ছিল ।

১৫ দিন পর মায়ের কাছে খবর যায় তাঁর মেয়ে গলায় দড়ি দিয়েছে । তদন্ত করে জানা যায় যে মেয়েটি তাঁর বাবার দ্বারা বহুবার ধর্ষিতা হয় এবং মৃত্যুর সময় মেয়েটির পেটে বাচ্চা ছিল । সব থেকে মর্মান্তিক ব্যাপার, মেয়েটির বাবাকে যখন জিজ্ঞাসা করে পুলিশ যে আপনি এরকম কেন করলেন ? মেয়েটির বাবা বলেছিল যে" বীজটা ফেললাম আমি, তার থেকে গাছ বের হল , গাছে ফল হল , ফলটা চেকে দেখব না ?"

২. ২০০৪ সাল, একটি জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকায় একবার একটি মেয়ে তাঁর বান্ধবীর হয়ে চিঠি লিখেছিল একজন মনোবীদের কাছে । যেখানে মেয়েটি বলছে, তাঁর বান্ধবীর যখন ২ বছর বয়স, সেই সময় তাঁর বাবা মা দুজনেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায় । মেয়েটি তার পিসির কাছে মানুষ হয়েছে । মেয়েটির যখন ২৪ বছর বয়স সেই সময় মেয়েটির পিসতুতো দাদার এক বন্ধুর মেয়েটিকে পছন্দ হয় এবং দুই বাড়ীর ইচ্ছাতেই তাঁদের বিয়ে ঠিক হয় । পিসি পিসেমশাই দুজনে চাকরি করেন । মেয়েটি সারা দিন বাড়ীতে একা থাকে । একদিন পিসতুতো দাদা মেয়েটিকে রেপ করে । ছেলেটি বলে "আমরা এতদিন ধরে তোকে খাইয়েছি পরিয়েছি, আমরা না থাকলে তোকে মরে যেতে হত । তাই তোকে প্রথম ভোগ করার অধিকার একমাত্র যদি কারের থাকে সে আমি । মেয়েটি এই ভারে তাঁর ঋণ শোধ করেছিল , "ধর্ষিতা" হয়ে ।

৩. একটা নাটক দেখেছিলাম "30 DAYS OF SEPTEMBER" ... নাটকটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছিল । যেখানে একটি মেয়েকে দেখান হয়েছিল , মেয়েটি বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গ নিয়ে বেড়াত । মেয়েটির আত্মীয় স্বজনরা তাকে বিয়ের জন্য জোর দিতে থাকলে মেয়েটি বিয়ের প্রস্তাব গুলোকে নাকচ করতে থাকে । সেই সময় মেয়েটিকে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে পাঠান হয় । সেই ভদ্রলোক মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য জানতে পারেন । মেয়েটি ভদ্রলোককে জানান খুঁব ছোট বয়সে তাঁর বাবা মারা গেলে সে আর তার মা মামার বাড়ীতে এসে ওঠে । মামা তাঁদেরকে আলাদা একটা ফ্ল্যাট দেন থাকার জন্য । মেয়েটির তখন ৮ কিংবা ৯ বছর বয়স । মামা রোজ আসত সন্ধ্যা হলে, এসে মেয়েটিকে নিয়ে একটি ঘরে ঢুকে যেত । মেয়েটির ওপর চলত অকথ্য শারীরিক অত্যাচার । মামার লালসা চরিতার্থ হলে মেয়েটি বেরিয়ে আসত ঘর থেকে । মেয়েটি সেই মন রোগ বিশেষজ্ঞকে জানিয়েছিল" ডাক্তার বাবু আমার খুব যন্ত্রণা হত । মা আমাকে কোন কথা বলতে দিত না , মা আমার মুখে মিষ্টি গুজে দিত । আর বলতো মিষ্টিমুখ কর । কিন্তু আমার শরীরের যন্ত্রণা তাতে কমত না ।"

এরপর মামার বিরুদ্ধে যখন ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়, তখন মামা তা অস্বীকার করে বলেন " আমি খাইয়ে পরিয়ে এতদিন তোদের বাঁচিয়ে রাখলাম, এখন আমার বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ ? এই মা আর মেয়ে দুজনেই দুশ্চরিত্রা, তাই এরা আমার মতন একজন ভালো মানুষের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ তুলছে ।"

তখন মেয়েটির মা বলেন , "আরে তুই আমার নিজের দাদা, তুই তো আমাকেও ছাড়িস নি । "

এই নাটকটির Director ছিলেন Dr. Satyabrata Rout .....নাটকটি শেষ হওয়ার পর আমার মনে আছে অল্পবয়সী মেয়েরা Director কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিল , "Sir, আমাদের কেও কোন না কোন সময় নিজের পরিবারের মানুষের যৌন লালসার শিকার হতে হয়েছে ।"



বেশি দিনের কথা আমি বলছি না, চার পাঁচ বছর আগের কথা, অস্ট্রিয়াতে এক বাবা তাঁর মেয়েকে দীর্ঘ ২৫ বছর নিজের বাড়ীর মাটির নীচে একটি ঘরে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছিলেন ।এবং এই দীর্ঘ সময় মেয়েটি বেশ কয়েকটি সন্তানের মা হয়েছেন ।

আমি এখানে নিজের দেখা দুটো ঘটনা তুলে ধরছি ।

প্রথম যার সম্পর্কে বলব সে আমার নিকট আত্মীয়া । কিছু দিন আগে লিভার ক্যান্সারে মারা গেছেন । তাঁর পরিচয় না দয়েই বলছি, সেই মহিলার রং শ্যামলা হওয়ার জন্য তার বিয়ে হচ্ছিল না । আমরা ধরে নিলাম সেই মেয়েটির নাম হচ্ছে শ্যামা । মেয়েটির জাঠতুতো দাদা INDIAN ARMY তে উচ্চ পদে চাকরি করতেন, সেই সময় হায়দ্রাবাদে পোস্টেড ছিলেন । মেয়েটির দাদা ছুটিতে তাদের দেশের বাড়ীতে বেরাতে এসেছিল । যাওয়ার সময় শ্যামাকে সঙ্গে নিয়ে যায় এই বলে যে, সে ওখানে শ্যামার জন্য সম্বন্ধ দেখাবেন । শ্যামার সহজ সরল বাবা মা শ্যামাকে তাঁর জাঠতুতো দাদার সঙ্গে যেতে দেন । INDIAN ARMY র কামড়ায় দাদা আর বোন ছাড়া দ্বিতীয় কোন প্রাণী ছিল না । আড়াই দিন ধরে রক্ষক দাদা বোনকে ধর্ষণ করতে করতে চলে, সে হয়ে ওঠে ধর্ষক ।

হায়দ্রাবাদ পৌঁছে দেখে বৌদি সারা দিন বন্ধু বান্ধব আর পার্টি নিয়ে ব্যস্ত । আর দাদা বৌদির অনুপস্থিতিতে চলাতে থাকে ধর্ষণ । বৌ দিকে কিছু বললে সে উল্টে দেয় মারধোর । শেষে শ্যামা যখন বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসে তখন সে ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ।



আমার স্বামীর চাকরির জন্য আমাকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় থাকতে হয়েছে । এরকমই একবার ঘুরতে ঘুরতে আমরা একবার মালদায় পৌঁছলাম । সেখানে আমার বাড়ীতে এক মহিলা কাজ করতেন, তার কাছে শুনে ছিলাম তাঁর ছোট বোন উন্মাদ ছিল । সেই বোনকে বাড়ীতে রেখে ওঁর বাবা মা কাজে যেত । সেই মহিলার সেই সময় বিয়ে হয়ে গেছিল , তাই বোনটাকে একাই থাকতে হত ঘরে । মেয়েটা মাঝে মধ্যেই প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ত । কে তাঁর সর্বনাশ করত বোঝা যেত না । একদিন হল কি মেয়েটার মা কাজে না গিয়ে বাড়ীর পাশের ঝোপে লুকিয়ে ছিল দেখবে বলে যে কে তাঁর পাগলি মেয়েটার সর্বনাশ করে ।

মেয়েটার মা যা দেখল তা সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে নি । সে দেখল মেয়েটার নিজের কাকা লুকিয়ে মেয়েটার ঘরে ঢুকছে ।

কিছুদিন আগে আজ তকে একটা খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম । সেখানে দেখছি কেরালায় কোট্টমে এক পুত্র তাঁর মাকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করছে । মা পরে আর সহ্য না করতে পেরে পুলিশকে ঘটনাটা জানায় । একবার ভাবুনতো একজন মায়ের কাছে কতটা লজ্জার যে তাঁর গর্ভজাত সন্তান তাঁকে ধর্ষণ করেছে । এরকম একটা দৃষ্টান্ত আমরা জানলাম,তাহলে এরকম বহু ঘটে । মায়েরা লজ্জায় কারকে কিছু বলে না ।এরকম হলে তো মায়েরা সন্তানের জন্ম দেওয়াই বন্ধ করে দেবে ।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্ষকরা কিন্তু রক্ষকের বেশেই আমাদের পরিবার গুলোতে লুকিয়ে আছে । আমাদের দেখা খুব সাধারণ এবং নিরীহ দর্শনের মানুষ গুলো আসলে এক একটা রাক্ষস । তাদের কাছে মা,বোন বা মেয়ে সবাই হচ্ছে এক একটা "মেয়েছেলে", এককথায় ভোগ্যপণ্য । এই জন্যই প্রথমেই আমি বলেছি যে পুরুষদের মধ্যে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রবৃত্তি এখনও বজায় আছে । এদের মধ্যে একটাই সাইকোলজি কাজ করে সেটা হচ্ছে, নারী দুর্বল , খাওয়াপরায় তাদের ওপর নির্ভরশীল । তাই তাদের শরীর যেমন খুশি পুরুষ ব্যাবহার করতে পারে ।

পৃথিবীর বুক থেকে ধর্ষণ কথাটা মুছে যদি দিতে চাই তা হলে সেই সাফাই কর্মের সূচনা পরিবার থেকে করতে হবে । পরিবারে একটি পুত্র সন্তান জন্মালে তাঁকে ছোটর থেকে শিক্ষা দিতে হবে তাঁর মা, বোনেদের সম্মান করার শিক্ষা । যদি তা না পারেন তো মন্দিরে দেবী মূর্তির পূজ্য করা উচিত না ।যে সমাজে নারীর কোন সম্মান নেই সেখানে কোন দেবীর মন্দির থাকা উচিত নয় । আসুন আমরা আমাদের পরিবার গুলোকে এক একটি পবিত্র মন্দির বানাই , যেখানে আমাদের নারীরা একটু মর্যাদার সাথে থাকতে পারে ।





Comments

Popular Posts