আজ মালতীর কথা খুব মনে পড়ছে

আজ মালতীর কথা খুব মনে পড়ছে , মালতীকে মনে আছে তো ? সুনীল দাশের ছোটো বোন মালতীকে মনে নেই ! যে মেয়ে টি অকালে বিধবা হয়ে ফিরে এসেছিল দাদার বাড়ি, যার শরীর কে লেখক বর্ণনা করেছেন সদ্য স্নাতা বর্ষার প্রকৃতির সাথে । হ্যাঁ, ঠিক ক ধরেছেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীলকণ্ঠ পাখীর খোঁজ এর সেই মালতীর কথা বলছি । যাকে গ্রামের কিছু লীগ নেতারা নৌকায় তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিল । এবং মৃত ভেবে নদীর চরে ফেলে গেছিল । ক্ষত বিক্ষত মালতী পরেছিল নদীর চরে । আজ একটা খবর পড়ে বার বার মালতীর কথা মনে পড়ছে । মা-মেয়ে নদীতে বেড়িয়ে সন্ধ্যায় আনন্দচিত্তে বাড়ি ফিরে শান্তিতে ঘুমাতে যেতে পারতেন। কিন্তু তাঁদের একসঙ্গে ধর্ষণের শিকার হয়ে যেতে হলো হাসপাতালে। খবরটা এ রকম: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার এক মা (৩৫) ও তাঁর মেয়েকে (১৭) গত শনিবার রাতে গণধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। দুজনকে ওই রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে যুবলীগের কর্মী নূর আলম মল্লিককে (৩৫) আটক করে পুলিশে । যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিনজনসহ ছয় যুবক তাঁদের দল বেঁধে নির্যাতন করেন। নূর আলম ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু পরে দলীয় শক্তিতে বলীয়ান হয়ে, আরও অনেক পুরুষের সমর্থন পেয়ে এই ছয় নেতা সবকিছু অস্বীকার করতে পারেন। পারেন এমনকি খালাস পেতেও। তনু হত্যা হবার পর বাংলাদেশ এর সব জেলার বুদ্ধিজীবীরা তনুর হত্যাকারীদের মৃত্যু দণ্ডের দাবিতে মানব বন্ধন করেছিল, কিন্তু এখন দেখছি তারা নীরব । বংলাদেশের কিছু মানুষের মধ্যে জল্পনা দেখা দিয়েছে এই ঘটনার পর এবং তা হল , ইতালীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ভিক্তরিও ডি সিকা তাঁর দেশের লাঞ্ছনার প্রতীক করেছিলেন আশ্রয়ের সন্ধানে পলায়নরত মা ও মেয়ের ধর্ষণ ও তার পরের পরিস্থিতিকে। সেই বিখ্যাত ছবিটির নাম ‘টু উইমেন’। বাংলাদেশের কোনো অন্তর্দর্শী চলচ্চিত্রকার কি এই সময়ের অসহায়ত্বের প্রতীক হিসেবে বাউফলের এই মা ও মেয়ের ঘটনাটি বেছে নেবেন?
বাউফলের মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দলের ছয় স্থানীয় নেতা-কর্মী। এ প্রশ্ন তো জাগে, একাত্তরে লাখ লাখ বাঙালি নারীর ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার পর, লাখো নারীর ভয়ানক যন্ত্রণা ও প্রাণদানের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ থাকার কথা ছিল। স্বাধীনতার চেতনার জরুরি অংশ হওয়ার কথা ছিল ধর্ষণের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চেতনা। যা হওয়া উচিত, তা হয় না। তাই বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ নিত্যদিনকার ঘটনা। ভাবতে হবে, গলদটা কোথায়?
কিছু দিন আগে একটা পোষ্ট দেখেছিলাম ফেসবুকে । একটি মেয়ে কোরানে পা রেখে ছবি তুলেছিল বলে তাঁর মৃত্যুর দাবিত বাংলাদেশ এ মানব বন্ধন হয়েছিল , সকালে মন্দিরে যাওয়ার সময় নলডাঙ্গা দুর্গা মন্দিরের বৃদ্ধ পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলিকে (৬৯) কুপিয়ে ও পাবনা হেমায়েতপুর মন্দিরের সেবায়েত নিত্যারঞ্জন পান্ডেকে হত্যা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। কিন্তু সেই ভাবে কোন প্রতিবাদ নেই । দিকে এতদিন পরও প্রকৃত কোন আসামির দোষ স্বীকার না করা এবং হত্যাকেণ্ডের ক্লু না পাওয়ায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাংলাদেশে সরকারি আদমশুমারি অনুযায়ী হিন্দু জনসংখ্যা প্রতি বছরই কমছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় বৈষম্য এবং নির্যাতনের মুখে এদের বেশিরভাগই ভারতে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বলছিলেন কিভাবে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার হার কমছে।
“১৯৫১ সালে যে আদমশুমারি ছিল তাতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ২২ শতাংশ। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে আসলো ১৪ শতাংশে। আর সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশে।”পুজার ঢোল বাজছে, সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দূর্গোৎসবে সামিল হয়েছেন। এবার পুজা মন্ডপের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। কিন্তু এই উৎসবের আনন্দের মাঝেও সবাই জানেন, প্রতি বছর মন্ডপে পুজারির সংখ্যা কমছে, হারিয়ে যাচ্ছে অনেক চেনা মুখ। ২০০১ ও ২০১১ সালের শুমারির জেলাভিত্তিক তথ্য পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়, ১৫টি জেলায় হিন্দু জনসংখ্যা কমে গেছে। বিবিএসের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব জেলার হিন্দুরা দেশের অন্য কোনো জেলায় চলে গেছে, পরিসংখ্যান তা বলছে না। অর্থাৎ, অন্য জেলায়ও হিন্দু জনসংখ্যা বাড়েনি। কর্মকর্তারা এদের বলছেন, ‘মিসিং পপুলেশন’ বা ‘হারিয়ে যাওয়া মানুষ’।
বরিশাল বিভাগের কোনো জেলাতেই হিন্দুদের সংখ্যা বাড়েনি। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা—এই ছয়টি জেলায় ২০০১ সালের আদমশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল আট লাখ ১৬ হাজার ৫১ জন। ২০১১ সালের শুমারিতে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৬২ হাজার ৪৭৯ জনে।
খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা—পাশাপাশি এই তিন জেলায় হিন্দুদের সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে। বিভাগের নড়াইল ও কুষ্টিয়া জেলার প্রবণতা একই। ঢাকা বিভাগের মধ্যে এ তালিকায় আছে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা। অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলায়ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে হিন্দু বাড়েনি।
স্বাধীনতার আগের দুটি ও পরের পাঁচটি শুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা ও হার কমেছে। মুসলমানদের সংখ্যা ও হার সব সময়ই বেড়েছে। বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর হার মোটামুটি একই ছিল বা আছে। জামায়াতের মতো শক্তিগুলো পরিকল্পিত ও নিয়মিতভাবে নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে।

Comments

Popular Posts