ছদ্মবেশী

ছদ্মবেশী

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী





মুখের ভেতর মুখ, বিচিত্র সব চরিত্ররা ঘুরে বেরায় আশে পাশে । সহজে ধরা যায় না, ঘটনা গুলো একটু ঠাণ্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করলে এক গভীর রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায় তার ভেতরে । এদের বলে মুখোশ মানুষ,যারা কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে মিশে আছে আমাদের মধ্যেই । তাদের পরিবার,বাসস্থান সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না কিংবা তাঁরা দেন না । প্রত্যেকদিন সরকারি অফিস গুলোতে ভোটের কার্ডের জন্য বহু আবেদন পত্র জমা পরে । একটু খোঁজ নিলে দেখা যায় যে এদের সঠিক কোন পরিচয়,আগে যেখানে ছিলেন রেসানকার্ড এমন কি জন্ম সার্টিফিকেট কিছুই নেই, তবে,এরা এলো কোথা থেকে । এরা সুভাষী,সুচতুর এবং বন্ধুত্বপরায়ন স্বভাবের দ্বারা ধীরে ধীরে সমাজের কিছু মানুষের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে নিজেদের একটা নকল পরিচয় তৈরি করে রাখেন । এই প্রসঙ্গে একটা উদাহরন তুলে ধরছি,তাজ হোটেলে যখন জঙ্গি হানা হয় তখন তাজের রান্নাঘর থেকে এক রাঁধুনি তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে ছিল   "পাপা,মেরে দোস্ত নে মুঝে মার ডালা "।আমি প্রমাণ ছারা কোন কথা বলি না । ডিসকভারি চ্যানেলে মুম্বাই এর জঙ্গি হানার ওপর একটা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছিল,তাতে আমি সেই ছেলেটির বাবার একটি ইন্টার্ভিউ দেখেছিলাম । পরে তদন্ত করে জানা গেছিল মুম্বাই এটাকের বহু আগে ছেলেটি চাকরি নিয়ে তাজে ঢুকেছিল । কিভাবে অতবড় হোটেলে ছেলেটি চাকরি পেল,সব চেয়ে বড় প্রশ্ন ভারতে অনুপ্রবেশ করে কিভাবে নিজের নকল পরিচয় গড়ে তুলল এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন । এক্ষেত্রে আমি বলব সর্ষের মধ্যেই তো ভূত থাকে । পাঠানকোট হামলার পর জানতে পারা গেছে উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার থেকে সেনাবাহিনীর বহু লোক চরবৃত্তির সাথে জড়িত ছিলেন ।

আমার খুব কাছের একজন মানুষ হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড: সত্যব্রত রাউত । উনি NSD র প্রাক্তন ছাত্রও ছিলেন । স্যারের কাছ থেকে একটা ঘটনা শুনেছিলাম । একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে এক সময় থিয়েটারের মঞ্চ তার অভিনয় দিয়ে মাতিয়ে রাখতেন । পরে জানা গেছে তিনি পাকিস্তানী ছিলেন । দীর্ঘদিন ট্রেনিং নিয়ে ভারতে এসেছিলেন চর বৃত্তিতে । এখন সে পাকিস্তানে ফিরে গেছিলেন ।

এই প্রসঙ্গে আরেকটা ঘটনা মনে পরছে । হরিয়ানায় কিছুদিন আগে একজন ভিখারি ধরা পরেছে,যাকে সেখানকার মানুষ বহুদিন ভিক্ষা করতে দেখেছেন সে আসলে পাকিস্তানের চর ।
আমরা রাস্তায় বহু পাগলকে ঘুরতে দেখি । এরা কি সত্যি পাগল ? না অন্য কিছু ? জানি না সত্যি জানা নেই । আমার সবার কাছে অনূর্ধ্ব কোন কিছু সন্দেহজনক মনে হলে নিকতস্ত সরকারি আধিকারিককে অনুগ্রহ করে জানান । দেশটা আমাদের । দেশের মানুষদের সুরক্ষার দায়িত্বটাও আমাদের । চারদিকে শুধু একটাই কথা আমরা বড় বেশি অসহিষ্ঞা হয়ে পরেছি । আমি বলব , আরে মশাই ভারতের মতন সহিষ্ণু দেশ আর কোথাও আছে নাকি ? কোন দেশে দেখেছেন একজন সন্ত্রাসবাদীর ফাঁসী হয়েছে বলে মানুষ বিক্ষোভ জানায় ? এখানে সন্ত্রাসবাদীরা অবাধে বিচরণ করতে পারেন , যা অন্য কোথাও পারে না । ভারতে দুই শ্রেণীর মানুষ আছেন এক শ্রেণীর মানুষ যারা আপনার আমার মতন ভারতীয় আরেক দল যারা আদৌ ভারতীয় নাকি তা নিয়ে সন্দেহ আছে । এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন, আবেগ না মগজাস্ত্রকে কাজে লাগাতে হবে । মানুষের সাথে মিশুন কিন্তু ভেবে চিন্তে,অবশ্য ভেবে চিন্তে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে না । যদি কোন অসঙ্গতি মনে হয় সরে আসুন,খোঁজ খবর নিন, পুলিশকে
জানান । আমরা ভারতীয়রা ভীষণ সহিষ্ণু তাই আমাদের বারবার  শত্রুর আক্রমণের শিকার হতে হয় ।

আমির খান ও কাজল অভিনীত "ফানা" সিনেমাটা সবার নিশ্চয়ই দেখা ? গল্পটা আমাকে বলে দিতে হবে না । একজন চর কিভাবে সহজ সরল মানুষের মতন মিশে থাকে ।

বহু ধর্ম,বহু জাতির মিলন তীর্থ আমাদের দেশ । আমাদের একে অপরের হাত ধরে শক্তপোক্ত একটা প্রাচীর গড়তে হবে, এখনই সেই সময় । না হলে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে, আমাদের দেশটাও হয়তো ইরাক, সিরিয়ায় পরিণত হবে ।


জয় হিন্দ ।

Comments

Popular Posts