কিছু কথা

কিছু কথা
দেবশ্রী চক্রবর্তী
আজ এমন কিছু তথ্য তুলে ধরবো যা হয়তো আমার পাঠকদের কাছে অজানা হয়ে আছে । আমি নিজের কথাই আগে বলি, আমি নিজেই এই সব তথ্য জানতাম না । কিছু দিন আগে Garry J. Bass এর The Blood Telegram যত পড়েছি, তত অবাক হয়েছি । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধে চিন, মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল । পাকিস্তান আমেরিকা যুক্ত্রাষ্ট্রের থেকে নীতিগত সমর্থনের সাথে সাথে অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্যও পেয়েছিল ।আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের সংখ্যা যেমন করেই হোক কমিয়ে নিয়ে আসা । এর জন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আক্রান্ত মানুষের কাছে তারা কোন রকম খাদ্য এবং পথ্য সর্বরাহ না করে নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবতির্ন হয়ে ছিল । বন্যায় আক্রান্ত হাজার হাজার নিরিহ মানুষেরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকেন ।মৃত শরীর গুলো জলে ভাসমান অবস্থা পচে গলে গিয়ে আন্ত্রিক এবং কলেরার মতন রোগ মহামারির আকার ধারন করেছিল । এর পর তারা মার্কিনী অস্ত্রের মাধ্যমে নিরিহ মানুষদের গন হত্যা শুরু করেন ।বিদেশী রিপোর্টরদের ভয় দেখিয়ে বিমান ঘাটি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় । মিস্টার ব্লাডের বর্ননা পড়ে জেনেছি তার বাড়িতে কর্ম্রত কিছু মানুষ তাদের পরিচিতদের আশ্র্য দিয়েছিলেন । কারন নির্মম ভাবে গনহত্যা চলছিল রাজপথে । পাকিস্তান এই সময় ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে ভোলেনি । সব থেকে বেশি আক্রমন হয়েছিল হিন্দু জনতার ওপর । হিন্দু গ্রাম গুলিতে ঢুকে পুরুষ এবং বাচ্চাদের দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হত । বাংলাদেশের ১৫ থেকে ১৬% হিন্দু এই সময়ে ৫% এ নেমে এসেছিল । এই নির্মম পৈশাচিক লীলায় আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ দেশ ত্যাগ করে সীমান্ত পার করে ভারতে আশ্রয় নিতে থাকেন । ভারতবর্ষের ত্রিপুরা, আসাম এবং পশ্চিম বঙ্গের এমন অবস্থা হয় যে স্থানীয় মানুষারা সংখ্যালঘুতে পরিনত হন । কলেরা মহামারির আকার ধারন করলে , মৃতদেহ গুলোকে গর্তে ফেলে এক সাথে জ্বালিয়ে দেওয়া হতে থাকে । ভারত সরকার যে অর্থ এবং ত্রান সাহায্য পাঠাচ্ছিলেন, সেগুলো মধ্যসত্ত্বভোগীরা নিয়ে নিতে থাকেন, ফলে অসহায় মানুষের কাছে সাহায্য পৌছতে পারে না । আরেক ধরনের সমস্যা তৈরি হয় এবং তা হচ্ছে রিফিউজি হয়ে আসা মানুষ স্থানীয় জনগনকে তাদের ভয়ঙ্ক্র অভিজ্ঞতার কথা জানাতেন , সেই খবর সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংবাদপত্র গুলোতে প্রকাশিত হলে মানুষের ক্ষোভের সঞ্চার হতে থাকে । এর ফলে দেশের সংখ্যা লোঘুরা আক্রান্ত হতে পারেন । এই সব ভেবে ইন্দিরা গান্ধি পাকিস্তাঙ্কে হুশিয়ারি দেন, সে যেন তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নেন এবং তাদের সাথে সুবিচার করেন ।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা তুলে ধরবো সেই সময় কমিউনিস্ট পার্টি এবং মাওবাদীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্থানকে সমর্থ করেছিলেন । কারন, চীনের মাও সরকার সেই সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল । শুধু তাই না, ভারত থেকে বহু মাওবাদী নেতারা সেই সময় বাংলাদেশে গেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ।এমন কি ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি যারা সাম্যের কথা বলতেন, তাদের ও বিরোধিতা করেছিলেন কমিউনিস্টরা ।
সব শেষে একটা কথাই বলবো, যা তথ্য তুলে ধরলাম তা আমার কল্পনা প্রসূত না । মিঃ ব্লাড যিনি আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের একজন প্রতিনিধি হিসেবে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে এবং নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা একটি টেলিগ্রামের মাধ্যে পাঠিয়েছিলেন । তিনি নিজেদের দেশের ছদ্মবেশী সরকারের মুখোশ খুলে দিতে পিছপা হন নি ।

Comments

Popular Posts