ধর্ম- অধর্ম
ধর্ম- অধর্ম
দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী
ব্যাপারটা কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের খেলা না । যে ওরা এক গোল দিলো তো এবার দু গোল আমরা দেব ।
ব্যাপারটা ড্রয়িংরুমে বসে লুডো খেলার মতনও না যে ও আমার দুটো গুটি খেলো নে এবার আমি চারটে গুটি খাব । তা কিন্তু
একেবারেই না । আমি গর্বের সাথে বলছি আমি হিন্দু যে ধর্ম আমাদের সহনশীলতা শিখিয়েছে, যে ধর্মের মূল গ্রন্থ শ্রীমৎ ভগবৎ গীতায়
আমাদের শান্তিতে সহাবস্থানের কথা শিখিয়েছে । প্রেম ও শান্তির বানী শিখিয়েছে , অধর্মের বিনাশের শিক্ষা দিয়েছে । আমাদের কাছে এত মূল্যবান
দর্শন যখন আছে তখন আমরা অন্যকে অনুকরণ করে কেন অস্ত্র তুলে নেব ?
গীতাতে অধর্মের বিনাশের কথা বলেছে ।
ধর্ম হল লিপিবদ্ধ শৃঙ্খলিত প্রত্যাদেশ কে বিশ্বাস ও ধর্মানুষ্ঠান (প্রথা ) এঁর উপর আনুগত্য , যা সাধারনত " আধ্যাত্মিক " ব্যাপারে " দৃঢ় বিশ্বাস " এঁর সাথে সম্পর্ক যুক্ত ; এবং বিশেষ পূর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত ঐতিহ্য , জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা , রীতি ও প্রথা কে মানা এবং গবেষণা করা যাতে মানবজীবন কে বোঝা যায় এবং সেভাবে চালানো যায় ।
ধর্মের সঙ্গা যদি কারুকে জিজ্ঞাসা করি একেক জন একেক রকম উত্তর দেবে ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্ম সম্পর্কে বলেছেন,
মানুষের একটা দিক আছে যেখানে বিষয়বুদ্ধি নিয়ে সে আপন সিদ্ধি খোঁজে। সেইখানে আপন ব্যক্তিগত জীবনযাত্রানির্বাহে তার জ্ঞান, তার কর্ম, তার রচনাশক্তি একান্ত ব্যাপৃত। সেখানে সে জীবরূপে বাঁচতে চায়।
কিন্তু মানুষের আর-একটা দিক আছে যা এই ব্যক্তিগত বৈষয়িকতার বাইরে। সেখানে জীবনযাত্রার আদর্শে যাকে বলি ক্ষতি তাই লাভ, যাকে বলি মৃত্যু সেই অমরতা। সেখানে বর্তমান কালের জন্যে বস্তু সংগ্রহ করার চেয়ে অনিশ্চিত কালের উদ্দেশে আত্মত্যাগ করার মূল্য বেশি। সেখানে জ্ঞান উপস্থিত-প্রয়োজনের সীমা পেরিয়ে যায়, কর্ম স্বার্থের প্রবর্তনাকে অস্বীকার করে। সেখানে আপন স্বতন্ত্র জীবনের চেয়ে যে বড়ো জীবন সেই জীবনে মানুষ বাঁচতে চায়।
স্বার্থ আমাদের যে-সব প্রয়াসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তার মূল প্রেরণা দেখি জীবপ্রকৃতিতে; যা আমাদের ত্যাগের দিকে, তপস্যার দিকে নিয়ে যায় তাকেই বলি মনুষ্যত্ব, মানুষের ধর্ম।
কোন্ মানুষের ধর্ম। এতে কার পাই পরিচয়। এ তো সাধারণ মানুষের ধর্ম নয়, তা হলে এর জন্যে সাধনা করতে হ'ত না।
আমাদের অন্তরে এমন কে আছেন যিনি মানব অথচ যিনি ব্যক্তিগত মানবকে অতিক্রম ক'রে "সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ'। তিনি সর্বজনীন সর্বকালীন মানব। তাঁরই আকর্ষণে মানুষের চিন্তায় ভাবে কর্মে সর্বজনীনতার আবির্ভাব। মহাত্মারা সহজে তাঁকে অনুভব করেন সকল মানুষের মধ্যে, তাঁর প্রেমে সহজে জীবন উৎসর্গ করেন। সেই মানুষের উপলব্ধিতেই মানুষ আপন জীবসীমা অতিক্রম ক'রে মানবসীমায় উত্তীর্ণ হয়। সেই মানুষের উপলব্ধি সর্বত্র সমান নয় ও অনেক স্থলে বিকৃত ব'লেই সব মানুষ আজও মানুষ হয় নি। কিন্তু তাঁর আকর্ষণ নিয়ত মানুষের অন্তর থেকে কাজ করছে বলেই আত্মপ্রকাশের প্রত্যাশায় ও প্রয়াসে মানুষ কোথাও সীমাকে স্বীকার করছে না। সেই মানবকেই মানুষ নানা নামে পূজা করেছে, তাঁকেই বলেছে "এষ দেবো বিশ্বকর্মা মহাত্মা'। সকল মানবের ঐক্যের মধ্যে নিজের বিচ্ছিন্নতাকে পেরিয়ে তাঁকে পাবে আশা ক'রে তাঁর উদ্দেশে প্রার্থনা জানিয়েছে--
স দেবঃ
স নো বুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনক্তু।
সেই মানব, সেই দেবতা, য একঃ, যিনি এক, তাঁর কথাই আমার এই বক্তৃতাগুলিতে আলোচনা করেছি।
শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৮ মাঘ, ১৩৩৯
আমি ধর্ম মানে বুঝি পৃথিবীটাকে সব মানুষের বাস যোগ্য করে তোলা , যারা মানুষের জীবনকে ভয়ঙ্কর করে
তোলে তারাই অধর্ম করছে । এরা দেশ কাল নির্বিশেষে সব শ্রেনীতেই আছেন ।
IS জঙ্গীরা যেভাবে হত্যা লিলা চালাচ্ছে, এরা কি শুধু অমুসলিমদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে ? না এরা মুসলিম দেরও
হত্যা করছে, ইসলামী মেয়েদের যৌন-দাসী বানাচ্ছে । এদের অপকর্মের ভার নিশ্চয় সমগ্র মুসলিম সমাজ নেবে না ।
একটা কথা আছে PAST IS PAST.....হ্যাঁ, সব ধর্মে বলা আছে অতীতকে মনে রেখে বর্তমানটা নষ্ট করতে নেই । কিছুদিন আগে
আমার এক ভাই আমাকে বলল "তুমি আকবরকে ভালো বলছ ? মধ্যযুগে মুসলিম শাসকরা আমাদের ওর ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালিয়েছে তা
তুমি জান না ?"
হ্যাঁ, জানিতো এরা IS জঙ্গিদের মতন এক শ্রেণী, যেখান দিয়ে গেছে শুধু ধ্বংস লিলা চালিয়েছে । তবে এরা কিন্তু এদের লুঠতরাজের শিকার
কিন্তু এদের ধর্মের মানুষও হয়েছেন । তা জানার জন্য ইতিহাসটা ভালো করে পড়তে হবে ভাই । বাবর নামাতে এরকম ভয়ঙ্কর সুলতানদের কথা পড়েছি । বাবরের
নিজের বড় দিদি এবং বাবরের প্রথম শ্রী আয়েশাকে এদের অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল ।
তাই আক্রমণ যদি করতেই হয় বর্তমান যুগের এই অধার্মিক লোক গুলোকে করুন । সমগ্র সম্প্রদায়কে না ।
হজরত মহম্মদ কখনই বলেন নি নির্দোষ মানুষ গুলোকে ধরে ধরে হত্যা করতে এবং নারী শরীর নিয়ে ব্যবসা করতে । তাই যার নিজেদের ধর্মের
কথা মানে না তারা তো অধার্মিকই ।
আমি মুসলিম ভাইদেরও বলব সমগ্র হিন্দু ধর্মকে আক্রমণ না করে যেসব হিন্দুরা নিম্ন বর্ণের মানুষদের ওপর আক্রমণ চালায়, তাদের নগ্ন করে রাস্তায় দাড় করায়
তাদের আক্রমণ করুন । কারণ হিন্দু ধর্মে এরকম করার নির্দেশ কোথাও দেয় নি ।
সব শেষে বলব আমি একজন লেখিকা । সমাজের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে , আমি এমন কিছু
লিখব না যে "খোল দো" ,"আগুন পাখী " বা "ঠাণ্ডা গোস্ত" নামে ঘটনা গুলো সমাজে পুনরাবৃত্তি হোক ।
দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী
ব্যাপারটা কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের খেলা না । যে ওরা এক গোল দিলো তো এবার দু গোল আমরা দেব ।
ব্যাপারটা ড্রয়িংরুমে বসে লুডো খেলার মতনও না যে ও আমার দুটো গুটি খেলো নে এবার আমি চারটে গুটি খাব । তা কিন্তু
একেবারেই না । আমি গর্বের সাথে বলছি আমি হিন্দু যে ধর্ম আমাদের সহনশীলতা শিখিয়েছে, যে ধর্মের মূল গ্রন্থ শ্রীমৎ ভগবৎ গীতায়
আমাদের শান্তিতে সহাবস্থানের কথা শিখিয়েছে । প্রেম ও শান্তির বানী শিখিয়েছে , অধর্মের বিনাশের শিক্ষা দিয়েছে । আমাদের কাছে এত মূল্যবান
দর্শন যখন আছে তখন আমরা অন্যকে অনুকরণ করে কেন অস্ত্র তুলে নেব ?
গীতাতে অধর্মের বিনাশের কথা বলেছে ।
ধর্ম হল লিপিবদ্ধ শৃঙ্খলিত প্রত্যাদেশ কে বিশ্বাস ও ধর্মানুষ্ঠান (প্রথা ) এঁর উপর আনুগত্য , যা সাধারনত " আধ্যাত্মিক " ব্যাপারে " দৃঢ় বিশ্বাস " এঁর সাথে সম্পর্ক যুক্ত ; এবং বিশেষ পূর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত ঐতিহ্য , জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা , রীতি ও প্রথা কে মানা এবং গবেষণা করা যাতে মানবজীবন কে বোঝা যায় এবং সেভাবে চালানো যায় ।
ধর্মের সঙ্গা যদি কারুকে জিজ্ঞাসা করি একেক জন একেক রকম উত্তর দেবে ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্ম সম্পর্কে বলেছেন,
মানুষের একটা দিক আছে যেখানে বিষয়বুদ্ধি নিয়ে সে আপন সিদ্ধি খোঁজে। সেইখানে আপন ব্যক্তিগত জীবনযাত্রানির্বাহে তার জ্ঞান, তার কর্ম, তার রচনাশক্তি একান্ত ব্যাপৃত। সেখানে সে জীবরূপে বাঁচতে চায়।
কিন্তু মানুষের আর-একটা দিক আছে যা এই ব্যক্তিগত বৈষয়িকতার বাইরে। সেখানে জীবনযাত্রার আদর্শে যাকে বলি ক্ষতি তাই লাভ, যাকে বলি মৃত্যু সেই অমরতা। সেখানে বর্তমান কালের জন্যে বস্তু সংগ্রহ করার চেয়ে অনিশ্চিত কালের উদ্দেশে আত্মত্যাগ করার মূল্য বেশি। সেখানে জ্ঞান উপস্থিত-প্রয়োজনের সীমা পেরিয়ে যায়, কর্ম স্বার্থের প্রবর্তনাকে অস্বীকার করে। সেখানে আপন স্বতন্ত্র জীবনের চেয়ে যে বড়ো জীবন সেই জীবনে মানুষ বাঁচতে চায়।
স্বার্থ আমাদের যে-সব প্রয়াসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তার মূল প্রেরণা দেখি জীবপ্রকৃতিতে; যা আমাদের ত্যাগের দিকে, তপস্যার দিকে নিয়ে যায় তাকেই বলি মনুষ্যত্ব, মানুষের ধর্ম।
কোন্ মানুষের ধর্ম। এতে কার পাই পরিচয়। এ তো সাধারণ মানুষের ধর্ম নয়, তা হলে এর জন্যে সাধনা করতে হ'ত না।
আমাদের অন্তরে এমন কে আছেন যিনি মানব অথচ যিনি ব্যক্তিগত মানবকে অতিক্রম ক'রে "সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ'। তিনি সর্বজনীন সর্বকালীন মানব। তাঁরই আকর্ষণে মানুষের চিন্তায় ভাবে কর্মে সর্বজনীনতার আবির্ভাব। মহাত্মারা সহজে তাঁকে অনুভব করেন সকল মানুষের মধ্যে, তাঁর প্রেমে সহজে জীবন উৎসর্গ করেন। সেই মানুষের উপলব্ধিতেই মানুষ আপন জীবসীমা অতিক্রম ক'রে মানবসীমায় উত্তীর্ণ হয়। সেই মানুষের উপলব্ধি সর্বত্র সমান নয় ও অনেক স্থলে বিকৃত ব'লেই সব মানুষ আজও মানুষ হয় নি। কিন্তু তাঁর আকর্ষণ নিয়ত মানুষের অন্তর থেকে কাজ করছে বলেই আত্মপ্রকাশের প্রত্যাশায় ও প্রয়াসে মানুষ কোথাও সীমাকে স্বীকার করছে না। সেই মানবকেই মানুষ নানা নামে পূজা করেছে, তাঁকেই বলেছে "এষ দেবো বিশ্বকর্মা মহাত্মা'। সকল মানবের ঐক্যের মধ্যে নিজের বিচ্ছিন্নতাকে পেরিয়ে তাঁকে পাবে আশা ক'রে তাঁর উদ্দেশে প্রার্থনা জানিয়েছে--
স দেবঃ
স নো বুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনক্তু।
সেই মানব, সেই দেবতা, য একঃ, যিনি এক, তাঁর কথাই আমার এই বক্তৃতাগুলিতে আলোচনা করেছি।
শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৮ মাঘ, ১৩৩৯
আমি ধর্ম মানে বুঝি পৃথিবীটাকে সব মানুষের বাস যোগ্য করে তোলা , যারা মানুষের জীবনকে ভয়ঙ্কর করে
তোলে তারাই অধর্ম করছে । এরা দেশ কাল নির্বিশেষে সব শ্রেনীতেই আছেন ।
IS জঙ্গীরা যেভাবে হত্যা লিলা চালাচ্ছে, এরা কি শুধু অমুসলিমদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে ? না এরা মুসলিম দেরও
হত্যা করছে, ইসলামী মেয়েদের যৌন-দাসী বানাচ্ছে । এদের অপকর্মের ভার নিশ্চয় সমগ্র মুসলিম সমাজ নেবে না ।
একটা কথা আছে PAST IS PAST.....হ্যাঁ, সব ধর্মে বলা আছে অতীতকে মনে রেখে বর্তমানটা নষ্ট করতে নেই । কিছুদিন আগে
আমার এক ভাই আমাকে বলল "তুমি আকবরকে ভালো বলছ ? মধ্যযুগে মুসলিম শাসকরা আমাদের ওর ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালিয়েছে তা
তুমি জান না ?"
হ্যাঁ, জানিতো এরা IS জঙ্গিদের মতন এক শ্রেণী, যেখান দিয়ে গেছে শুধু ধ্বংস লিলা চালিয়েছে । তবে এরা কিন্তু এদের লুঠতরাজের শিকার
কিন্তু এদের ধর্মের মানুষও হয়েছেন । তা জানার জন্য ইতিহাসটা ভালো করে পড়তে হবে ভাই । বাবর নামাতে এরকম ভয়ঙ্কর সুলতানদের কথা পড়েছি । বাবরের
নিজের বড় দিদি এবং বাবরের প্রথম শ্রী আয়েশাকে এদের অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল ।
তাই আক্রমণ যদি করতেই হয় বর্তমান যুগের এই অধার্মিক লোক গুলোকে করুন । সমগ্র সম্প্রদায়কে না ।
হজরত মহম্মদ কখনই বলেন নি নির্দোষ মানুষ গুলোকে ধরে ধরে হত্যা করতে এবং নারী শরীর নিয়ে ব্যবসা করতে । তাই যার নিজেদের ধর্মের
কথা মানে না তারা তো অধার্মিকই ।
আমি মুসলিম ভাইদেরও বলব সমগ্র হিন্দু ধর্মকে আক্রমণ না করে যেসব হিন্দুরা নিম্ন বর্ণের মানুষদের ওপর আক্রমণ চালায়, তাদের নগ্ন করে রাস্তায় দাড় করায়
তাদের আক্রমণ করুন । কারণ হিন্দু ধর্মে এরকম করার নির্দেশ কোথাও দেয় নি ।
সব শেষে বলব আমি একজন লেখিকা । সমাজের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে , আমি এমন কিছু
লিখব না যে "খোল দো" ,"আগুন পাখী " বা "ঠাণ্ডা গোস্ত" নামে ঘটনা গুলো সমাজে পুনরাবৃত্তি হোক ।
Comments
Post a Comment