ভালো থেকো
দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী
আমাদের দেশ ভারতবর্ষকে অসহিষ্ঞুতার খেতাব যারা দিয়েছ তাদের আমি একটা কথাই বলব যে আমাদের দেশে
আমরা প্রাণ খুলে কথা বলতে পারি, কেউ আমাদের গলা কাটতে আসে না । আমি ইদানীং বাংলাদেশের একটা সাইটে ব্লগ
লিখছিলাম । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, মুক্তিযুদ্ধে বন্ধু দেশ ভারতের অবদান,বিশ্বের উদ্বাস্তু সমস্যা এই সব নিয়ে লেখা । আমাকে 
কিছু লোক রে রে করে তেড়ে এল । নোংরা নোংরা মন্তব্য, কেউ কেউ ভারতের দালালও বলল । আমি বাধ্য হয়ে মূক্তিযুদ্ধের লেখাটা
ডিলিট করে দিলাম । ভারতে মুসলিমদের ওপর নাকি অত্যাচার হচ্ছে । বাংলাদেশে কি ভালো আছে হিন্দুরা?
দিন দিন হিন্দুদের সংখ্যা কমছে কেন ঐ দেশে ? বাংলাদেশের একটি পত্রিকার থেকে তুলে ধরছি
"২০০১ ও ২০১১ সালের শুমারির জেলা-ভিত্তিক তথ্য পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়, ১৫টি জেলায় হিন্দু জনসংখ্যা কমে গেছে। বিবিএসের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব জেলার হিন্দুরা দেশের অন্য কোনো জেলায় চলে গেছে, পরিসংখ্যান তা বলছে না। অর্থাৎ, অন্য জেলায়ও হিন্দু জনসংখ্যা বাড়েনি। কর্মকর্তারা এদের বলছেন, ‘মিসিং পপুলেশন’ বা ‘হারিয়ে যাওয়া মানুষ’।
বরিশাল বিভাগের কোনো জেলাতেই হিন্দুদের সংখ্যা বাড়েনি। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা—এই ছয়টি জেলায় ২০০১ সালের আদমশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল আট লাখ ১৬ হাজার ৫১ জন। ২০১১ সালের শুমারিতে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৬২ হাজার ৪৭৯ জনে।
খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা—পাশাপাশি এই তিন জেলায় হিন্দুদের সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে। বিভাগের নড়াইল ও কুষ্টিয়া জেলার প্রবণতা একই। ঢাকা বিভাগের মধ্যে এ তালিকায় আছে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা। অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলায়ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে হিন্দু বাড়েনি।
স্বাধীনতার আগের দুটি ও পরের পাঁচটি শুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা ও হার কমেছে। মুসলমানদের সংখ্যা ও হার সব সময়ই বেড়েছে। বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর হার মোটামুটি একই ছিল বা আছে।
প্রবীণ রাজনীতিক ও গণঐক কমিটির আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রদায়িক আবহ তৈরি করে সম্প্রীতি নষ্ট করায় এমনটা ঘটছে। জামায়াতের মতো শক্তিগুলো পরিকল্পিত ও নিয়মিতভাবে নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, কুড়িগ্রামের চিরিরবন্দরে ধর্মীয় জিগির তুলে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না, তাদের আশ্বস্ত করছে না। নীরবে তাই দেশত্যাগ হচ্ছেই।
কেন কমছে: একাধিক শুমারির প্রতিবেদনে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোট প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট—টিএফআর) তুলনামূলকভাবে কম বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এর পক্ষে কোনো তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছে চেয়ে পাওয়া যায়নি।
তবে গোপালগঞ্জ, বরিশাল, ভোলার বিভিন্ন গ্রামে কথা বলে জানা গেছে, হিন্দুদের সংখ্যা কমে যাওয়ার বড় কারণ দেশত্যাগ। কয়েকটি জেলার লোকজন বলেছেন, ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগের সময় থেকে এই ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। কেউ বলেছেন, মূল কারণ শত্রু সম্পত্তি আইন। বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের চাপ ও নির্যাতনে পড়তে হয় হিন্দুদের। অন্যদিকে ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিলে তার আঁচও লাগে এ দেশের হিন্দুদের গায়ে।
‘বুক বেঁধে দাঁড়াবার সংস্কৃতি কমে গেছে’—এমন মন্তব্য করেছেন ড. আনিসুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অভাববোধ বাস্তব ও অনুমিত। সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে কিছু লোক নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে কিছু নেতা বা রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে স্থানীয় পর্যায়ে সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয় না, কর্মী পাওয়া যায় না।
আতঙ্ক আছে চাঁদশী-ইল্লা-ধানডোবায়: বরিশাল জেলার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে বেশ কিছু হিন্দু পরিবার ২০০১ সালের পর এলাকা থেকে চলে গেছে।
ধানডোবা গ্রামে গিয়ে জানা যায়, মনোজ বৈদ্য তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনের দুই দিন পর বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আর ফিরে আসেননি। মনোজের প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই নির্বাচনের পরদিনই বিএনপির কর্মীরা গ্রামের হিন্দু ও খ্রিষ্টানবাড়িতে আক্রমণ ও লুটপাট করেন। তাঁরা মনোজের বাড়ি থেকে গরু, ধান নিয়ে যান। পানের বরজ নষ্ট করেন।
ইল্লা গ্রামের কালীপদ দফাদার, সুবল দফাদার, মন্টু দফাদার, জয়দেব নন্দীর পরিবারও দেশ ছেড়ে চলে যায় ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সন্ত্রাসের কারণে। একই কারণে সুতারবাড়ি গ্রামের আদিত্য নাগ ও সুবল দে পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়েছেন।
৩ নম্বর চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত দে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নিজের পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশীসহ অনেক পরিবারে আক্রমণ, লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ইউনিয়ন থেকে কোনো পরিবার এলাকা ছেড়ে যায়নি। তবে অনেক পরিবারের অংশবিশেষ দেশে থাকে না। তিনি বলেন, ‘ধরেন, কোনো পরিবারে পাঁচ ভাই আছে, তাদের দুই ভাই দেশে থাকে না।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, সম্মান রক্ষায় অনেক বাবা-মা অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন, অথবা ভারতে রেখে স্কুলে বা কলেজে পড়াচ্ছেন। তবে তিনি দাবি করেন, দেশত্যাগের প্রবণতা কমেছে। শত্রু সম্পত্তি (অর্পিত সম্পত্তি) নিয়ে সরকারের উদ্যোগ পুরোপুরি সফল না হলেও সংখ্যালঘুরা আশা করছে, সম্পত্তি আর হাতছাড়া হবে না বা হাতছাড়া সম্পত্তি ফেরত পাবে। এখন বড় বড় শহরে হিন্দুরা বাড়ি করছে, ফ্ল্যাট কিনছে।
ভোলার পরিস্থিতি: বিবিএস পরিসংখ্যান বলছে, ভোলা জেলায় ২০০১ সালে হিন্দু ছিল ৭২ হাজার ২৭৫ জন। সর্বশেষ শুমারিতে দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ১৬২ জনে।
ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের নলগোড়া গ্রামের সাধু সিংয়ের বাড়িতে ছিল ছয়টি পরিবার। পরিবারের প্রধান ছিলেন লক্ষ্মী নারায়ণ সিং। লক্ষ্মী নারায়ণ ১৯৯২ সালের পরে জমিজমা বিক্রি করে চলে যান। ওই গ্রামের লোকজন প্রথম আলোকে বলেছেন, ১৯৯২ সালের পর থেকে হিন্দু পরিবারগুলো চলে যেতে শুরু করে। ওই সময় বাররি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে ভারতে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল, তাতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার হয় এই গ্রামের মানুষ।
২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরও অনেক পরিবার চলে গেছে। গ্রাম ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯২ সালের পর থেকে সুতারবাড়ির চারটি, ডাক্তারবাড়ির ১০, মাঝের সিংবাড়ির ছয়, রাস কমল হাওলাদার বাড়ির সাত, লক্ষ্মীকান্ত হাওলাদার বাড়ির তিন, তীর্থবাস হাওলাদার বাড়ির সাত, পরেশ হাওলাদার বাড়ির সাত, তেলীবাড়ির তিন, রাধেশ্যাম সুতারবাড়ির তিন, মন্টু হাওলাদার বাড়ির এক এবং রাড়ি বাড়ির সব কটি পরিবারসহ গ্রামের ৭৫টি বাড়ির দুই শতাধিক পরিবার চলে গেছে।
উপজেলার নলগোড়া, লেজপাতা ও চরগুমানী—এই তিনটি গ্রাম ছিল হিন্দু-অধ্যুষিত। স্বাধীনতার সময় এই গ্রামে চার শতাধিক বাড়ি ছিল। এই গ্রামগুলোর ১৭২টি বাড়ির কয়েক শ পরিবার চলে গেছে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এক হাজারের বেশি হিন্দু পরিবার ছিল। বর্তমানে সেখানে আছে ৪৪টি পরিবার।
লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে চারটি গ্রাম ছিল হিন্দু-অধ্যুষিত। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়নে চার হাজার ৬০০ হিন্দু ভোট ছিল। ইউনিয়নের অন্নদাপ্রসাদ গ্রামের যাত্রামণি লস্কর বলেন, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের ঘটনা ও ২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে গ্রামগুলোর অধিকাংশ হিন্দু পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে বলা হচ্ছে, বর্তমানে ইউনয়নে হিন্দু ভোটারের সংখ্যা ৬০০।
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রাধান্য। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, দলটির সঙ্গে সংখ্যালঘুদের সুসম্পর্ক আছে। স্বাধীনতার পর জেলায় সাম্প্রদায়িক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও উল্লেখ করার মতো নয়। তার পরও এই জেলা থেকে নিয়মিতভাবে হিন্দুরা চলে যাচ্ছে। ২০০১ সালে এই জেলায় হিন্দু ছিল তিন লাখ ৭১ হাজার ৬২৯ জন। ১০ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৪ জনে।
জেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ সাংবাদিক প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘শত্রু সম্পত্তির’ নির্যাতন চেপে আছে প্রায় ৫০ বছর ধরে। এরপর বড় আঘাত আসে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার মধ্য দিয়ে। এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেছেন, উপযুক্ত হওয়ার পরও জেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের পদ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পায় না। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সংসদে হিন্দু শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ পদ সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)। ছোট গোপালগঞ্জ শহরে বড় দলের নেতারা সংখ্যালঘুদের বাড়ি-সম্পত্তি দখল করে দিব্যি বসবাস করছেন। এসব দৃশ্য দেখে নিরাপদ বোধ করে না হিন্দুরা।
গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে কাজল দেবনাথের মন্তব্য, ‘প্রদীপের নিচে অন্ধকার।’
উদ্যোগ নেই: দেশত্যাগ বন্ধের উদ্যোগ এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপালগঞ্জ জেলার একজন চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘নিরাপদে জমি-বাড়ি যেন বিক্রি করতে পারে, সে ব্যাপারে কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করি। থেকে যেতে বলতে পারি না।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদ্যাপন পরিষদ মাঝেমধ্যে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সভা ও সেমিনার করে। এসব সভা-সেমিনারে দেশ না ছাড়ার, নির্যাতনের প্রতিবাদ করার কথা বলা হয়। কাজল দেবনাথের দাবি, এতে কাজ হচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৪তম বিজয় দিবস পালন করবে। দেখতে দেখতেই বাংলাদেশের বয়স এখন ৪৪ বছর। এই ৪৪ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির কতোটা উন্নতি ঘটেছে, এনিয়ে দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা প্রায় প্রতিবছরই রিপোর্ট প্রদান করে থাকে। সেই রিপোর্টে প্রায় প্রতিবছরই একটি ঘটনা সর্বত্র স্থান পায়- বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী (মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭ ভাগের কম বা বেশি) হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, এবং মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারীদের সবাই এখনো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতনের এসব গাণিতিক তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করেন। অর্থাৎ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকেও একটি অবধারিত ভিত্তি ধরা হয়। বিগত ৪৩ বছর ধরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রায় প্রতি বছরই উদ্বেগজনক ছিল। প্রতিবছর শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় বা মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের সংবাদ পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে কী আমরা একটি বছরও এই কলংক থেকে কখনও রেহাই পেয়েছি?আগামী ১২ অক্টোবর ২০১৫ বাংলাদেশে শুভ মহালয়া। এই দিন থেকে শুরু হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন শারদীয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। কৈলাশের শ্বশুরালয় থেকে মা দূর্গা এই দিন পিতৃগৃহে আগমন করবেন। এই দিন থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্দিরে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ শুরু হবে। জাতির মঙ্গল কামনায় সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রতিবছর মহালয়ার দিন দেবী দুর্গা শ্বশুরালয় থেকে পিতৃগৃহে আসেন। আসুরিক শক্তির বিনাশ আর পার্থিব শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে মা দুর্গার এভাবেই আরাধনা করে আসছে। প্রতিবছরের মত এ বছরও শারদীয়া দুর্গা উৎসব উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে করা হচ্ছে ব্যাপক আয়োজন। প্রতিবছর বাংলাদেশে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছরও বাড়ছে প্রায় ৫ শতাধিক পূজামণ্ডপ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এবং উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশে প্রতিবছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা বাড়লেও ভক্ত বা পূজারীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা প্রতিবছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কিন্তু পাশাপাশি তাঁরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, আগামী ১২ অক্টোবর শুভ মহালয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সারাদেশে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এছাড়া আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল পূজা শুরু হবে। ১৮ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে বেদীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, ১৯ অক্টোম্বর মহাসপ্তমীতে সকালে মহাসপ্তমী পূজা, সন্ধি পূজা, ২০ অক্টোবর মহাষ্টমীতে সকালে দেবীর মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ, রাত ১১টা থেকে ১১টা ৫২ মিনিটে সন্ধি পূজা, ২১ অক্টোবর মহানবমীতে পূর্বাহ্নে দেবীর মহানবমী পূজা সমাপন ও ২২ অক্টোবর শুভ বিজয়ায় সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ এবং সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে পূজা সমাপন ও রাতে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হবে।
এবছর সারাদেশে অন্তত সাড়ে ২৮ হাজার থেকে ২৯ হাজারের কাছাকাছি দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। পরিষদের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে সারাদেশে ২৮ হাজার ৩৫৮টি, ২০১৩ সালে ২৮ হাজার ২০০টি, ২০১২ সালে ২৭ হাজার ৮শ’টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা প্রায় প্রতিবছরই প্রচার করি- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের মহান সংবিধানে যদিও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে (দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯১ ভাগের বেশি মুসলিম সম্প্রদায়) কিন্তু সেখানে সুস্পষ্টভাবে আলাদা কোটেশানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের সকল নাগরিক নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবেন। অথচ প্রতিবছর সার্বজনীন শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের সংবাদ আসে। যা পুরো শারদীয়া দুর্গা উৎসবের যেন এক চিরায়ত কলংকময় অধ্যায়। বাংলাদেশের বয়স ৪৪ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই কলংক থেকে বাংলাদেশের এখনো মুক্তি মেলেনি!!
গতকাল পত্রিকায় দেখলাম সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কর্মকারপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ১৫টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শারদীয়া দুর্গাপূজা যতই কাছে আসছে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবরও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। চলতি বছর বাংলাদেশে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের এখন পর্যন্ত কয়টি ঘটনা ঘটেছে এই মুহূর্তে সেই তথ্যটি জানা না গেলেও মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা যে থেমে নেই, উদ্বেগের জায়গাটি সেখানে। অন্যান্য বছরের মতো এবারো রাজধানী ঢাকার পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পূজা কমিটি সূত্র জানায়, সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সারাদেশে শারদীয়া দুর্গা উৎসবের সময় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের এত ঘটনা ঘটার পরেও রাষ্ট্র কেন সার্বিক নিরাপত্তায় আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোতায়েন করে না?
মূলত শারদীয়া দুর্গাপূজার ব্যাপারটি শুরুই হয় নতুন প্রতিমা তৈরি/গড়ার শুরুর দিন থেকে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেবার বিষয়টি কেন তখন থেকেই ভাবা হয় না? সাধারণত প্রতিমা তৈরি করার কাজটি অন্তত শুভ মহালয়ার পনেরো/বিশ দিন আগে থেকেই শুরু হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে শারদীয়া দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয় মহাষষ্ঠী থেকে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েই দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুরের কাজটি আগেই সেরে ফেলে। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহলের ফাঁক গলিয়েও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির কারণেও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাকে কোনোভাবেই রাষ্ট্র বন্ধ করতে পারছে না। বন্ধ করতে পারছে না, না বলে বলা উচিত, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো পরিলক্ষিত হয় না।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'আশাশুনির প্রতাপনগর কর্মকারপাড়ার প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।' আমি পুলিশ সুপারের এই বক্তব্যের সঙ্গে মোটেও একমত নই। প্রতিবছরই মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটবে আর আপনারা যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে, দায়সারা গোছের এভাবে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' বলে সেই দায় এড়াতে পারেন না। রাষ্ট্র এই দায় এড়াতে পারে না। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ও এই দায় এড়াতে না। বাংলাদেশের কোনো দায়িত্বশীল নাগরিকই এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। তাহলে রাষ্ট্র কেন প্রতিমা তৈরি করার শুরু থেকেই মন্দির ও পূজামন্ডপের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় না? যে ঘটনাটি দীর্ঘ ৪৩ বছরের একটি ধারাবাহিক অপরাধ, সেই অপরাধটি কিভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়? হ্যাঁ পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমি একমত হতাম, যদি স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছরে এটি কেবল একটিমাত্র ঘটনা হতো, তাহলে এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার সুযোগ ছিল। কিন্তু একই ঘটনা তো প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে ঘটছে। আর আপনারা একই কাসুন্দি বলে সেই দায় এড়াতে চাইছেন। সেই কাসুন্দির নাম 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা'!
চলতি বছর ১১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়ি ইউনিয়নের কাঠাজোড়া গ্রামের বিশ্বাসবাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছিল দুর্বৃত্তরা। সেই ঘটনার কী কোনো বিচার হয়েছে? সেই ঘটনায় কী আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে? আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক রিপোর্টে দেখলাম, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট ২০১৫ পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১০৩টি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে ৬টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে ১৪১টি মন্দিরে এবং মন্দিরে রক্ষিত প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আর এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৪২ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্যাতন বা বলপ্রয়োগ করে আহত করা হয়েছে। সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর কর্মকারপাড়ার প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা যদি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়, তাহলে সারা দেশে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে মাত্র আট মাসে কিভাবে ১৪১টি মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে? কোনটাকে আপনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায় এড়াবেন মিস্টার পুলিশ সুপার?
প্রতিবছর দেশে শারদীয়া দুর্গাপূজায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়লেও পূজারীর সংখ্যা কমছে, পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান হারে কমছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী। এটি বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য একটি উদ্বেগজনক সংবাদ। এটি যা প্রমাণ করে, সেটি হলো, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ছাড়ছেন। তাঁদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করে ব্যবসা, বাড়িঘর, সম্পত্তি লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও মামলার হুমকি বাড়ছে। তাঁদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। যে কারণে নিরাপত্তাহীন অসহায় পরিবারগুলো বাপ-দাদাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্মভিটা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, রাষ্ট্র স্বয়ং এই বিষয়কে তেমন গায়ে লাগাচ্ছে না। বরং কখনও কখনও রাষ্ট্রের মন্ত্রী, সাংসদ, জনপ্রতিনিধিনিধি বা তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় এই হামলা ও মামলার খবর প্রকাশিত হলেও কোনোটির আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি।
একদিকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। অন্যদিকে সেই হামলা ও নির্যাতনের কোনো বিচারও হচ্ছে না। এক বিচারহীনতার সংস্কৃতিই যেন আজকের ৪৪ বছরের বাংলাদেশের এক জঘন্য কলংকে পরিণত হয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতনের বিচারপ্রক্রিয়া যেন হাজার বছরেও শেষ হবে না, এমন একটি সংস্কৃতি এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। যেটি সত্যি সত্যিই বড় উদ্বেগের বিষয়। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণী বা যে কোন গোষ্ঠীরই হোক, সবার সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দল যখনই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে তাদের যেন এই জায়গাটিতে একটি ইচ্ছাকৃত দায়িত্বহীনতার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। আশ্চার্যজনক সত্য হলো, সবার ক্ষেত্রেই এখানে একটা বড় ধরনের সাদৃশ্য রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেশের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক মনে করার মত একটি প্রচ্ছন্ন ব্যাপার এখানে দৃশ্যমান। বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি এই ঘটনার সাক্ষ্য দেয়। দেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা এর সাক্ষ্য দেয়। যার দায় রাষ্ট্র কিছুতেই এড়াতে পারে না।
আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ সুবিধা পাবে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণী, গোষ্ঠী, বা সম্প্রদায় যা-ই হোক না কেন, আইন যেমন সবার জন্য সমান হবে, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, উৎসব করার স্বাধীনতা সবার বেলায় সমান হবে। এখানে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু নিধনে প্রতিটি সরকার নিরবে সক্রিয় থেকেছে। যে কারণে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমরা মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। আর রাষ্ট্র এখানে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য মোটেও কোনো সুখবর নয়। তাহলে আবারও সেই প্রশ্নটি আসে, আমরা কী এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
শারদীয়া দুর্গা উৎসব সবার। দুর্গা পূজা হয়তো কেবল সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করবেন। কিন্তু শারদীয়া দুর্গা উৎসব তো বাংলাদেশের সবার। আমাদের কেন এখনো স্বাধীনতার ৪৪ বছরে এসেও মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সংবাদে উদ্বেগ হতে হবে? তাহলে রাষ্ট্র আসলে করছেটা কী? আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, যেসব দুর্বৃত্ত এর সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের কাছে সমর্পন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। নইলে লোক দেখানে সার্বজনীন উৎসবে কোথায় যেন একটা অসুরীয় ব্যাপার ঘাপটি মেরে থাকে, যা কোনোদিন জাতির সর্বিক মঙ্গল করতে পারে না। একটা কলংক যেন আড়ালে থেকেই যায়। আমরা কলংকমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আমরা ১৬ কোটি মানুষ কী সেই স্বপ্নের বাংলাদেশের কথা ভাবতে পারি না?
"
বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা কমছে অথচ ভারতে বারছে । ভারতে মুসলিমরা সবচেয়ে ভালো আছেন তাই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
শীর্ষ ৪ দেশে অবস্থানরত মুসলিম জনসংখ্যা:-
১। ইন্দোনিশিয়া, (১২.৭%) ২। পাকিস্থান, (১১.০%) ৩। ভারত, (১০.৯%) ৪। বাংলাদেশ, (৯.২)
ভারতে মুসলিমদের ওপর কোন অত্যাচার হলে বুদ্ধিজীবীরা গরুর মাংস খেয়ে প্রতিবাদ করেন , পুরষ্কার ফেরত দেন । বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হলে বুদ্ধিজীবীরা শূয়োর খেয়ে প্রতিবাদ করবেন তা ভাবাই যায় না ।
ভারতবর্ষে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উচ্চপদ এবং সেনাবাহিনীতে মুসলিমরা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ।
কিন্তু মুসলিমপ্রধান দেশ গুলিতে কটা উচ্চপদ কিংবা সেনাবাহিনীতে কজন হিন্দু ছিলেন ?
পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে মানুষ ঢুকছে, সঙ্গে বেশ কিছু ISIS মার্কা জিনিস পত্রও ঢুকছে । দেশটা যে কিছু দিনের মধ্যে KHURASAN এ না পরিনত হয় । যা ISIS জঙ্গীদের স্বপ্ন । এটাই একটা ভয় ।
তখন কিন্তু ভারতীয় মুসলিমরাও ভলও থাকবে না । কারণ এরা মধ্য এশিয়ায় মুসলিমদের কি অবস্থা করছে তা আমাদের সবার জানা ।
এখনও সময় আছে দেশের স্বার্থে নিজেদের মধ্যে সংহতি ঐক্য বজায় রাখতে হব । বিদেশীদের ফাঁদে পা দিলে হবে না ।

Comments

Popular Posts