আমার নাগমন্ডল

আমার নাগমন্ডল

দেবশ্রী

শৈশবেতে আমের বনে

বাদলা দিনে আমের খোঁজে,

অন্ধকারে গাছের নীচে

একখানি নাগ ছিল বসে,

পা পিছলে এক ছুটটে

ফিরে এলাম মায়ের কাছে ।

রাতের বেলা আমার স্বপ্নে

দেখলাম সে নাগ ঘরের মাঝে ।

আঁতকে উঠে মায়ের বুকে

মুখ গুঁজলাম, আজও মনে আছে ।

বছর দশেক কেটে গেল,

নাগের স্মৃতিও মুছে গেল ।

মনসা পূজার বিকেল বেলা

ভায়ের সাথে ছেলে খেলায়

লুকিয়ে ছিলাম ঠাকুর ঘরে,

ভাই আমায় পাবে না খুঁজে ।

আনন্দেতে হাসতে হাসতে

চোখ পড়ল মনসার দিকে,

দুটি চোখ জ্বলছে দেখে

নাগের স্মৃতি এল ফিরে ।

দম বন্ধকরা আতঙ্কে

মূর্ছা গেলাম ঠাকুর ঘরে ।

তারপরে আমার বিয়ে হল

বেশ কিছু দিন কেটে গেল ।

স্বামী আমার ব্যস্ত মানুষ,

দেশোদ্ধারে নিবেদিত প্রাণ

এমনই সে এক তেজী পুরুষ ।

ছাপোষা এক সাধারণ নারী আমি,

তার সঙ্গে কি আর পেরে উঠি ?

পরে রইলাম গৃহের কোনে

অন্ধকারে নিরাশাতে ।

অচেনা এক সিসের সুর

হঠাৎ এলো আমার কানে,

অন্ধকারে ঘরের কোঁনে

দুটি আখি জ্বললো উঠে ।

কে...কে গো তুমি...

একবার এসো না কাছে !

অবশেষে এলো সে কাছে,

বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল দুটি আঁখি ।

মন বলল, "চল একবার ডুবেই মরি" ।

আমি বললাম না না ..আমি যে বিবাহিতা নারী ।

সে আসত অন্ধকারে আমার কাছে

পৃথিবী নিস্তব্ধ হলে ।

দেশ বিদেশের নানা গল্প-কথা

শোনাতো সে এসে ,

আমরা পাগল হলাম মদন বানে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ।

রাত হলেই সে আসতো আমার কাছে,

ভোরের বেলায় উধাও হত

না জানি কোন দেশে,

আমি ভেবে মরতাম নিজে ।

এক রাতে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে

বললাম তাকে, কে তুমি ?

আজ দিতেই হবে তোমার আসল পরিচয় খানি ।

সে বলল, কি হবে জেনে ?

এটুকুই সত্যি আমি তোমায় ভালোবাসি ।

বললাম,যদি বাস তা দাও তোমার পরিচয় খানি।

হঠাৎ করে জ্বলে উঠল অন্ধকারে দুটি আঁখি ,

আমি ভয়ে আঁতকে উঠি ।

সে বলল, এই জন্যই লুকিয়ে ছিলাম আসল পরিচয়,

নিয়ে ছিলাম মানুষের রূপের আশ্রয় ।

সব ভয় মুছে গেল মন থেকে,

আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলাম তার সাথে ।

হে ইচ্ছা ধারি আমি তোমায় ভালোবাসি

এই সত্যটুকুই শুধু মনে রাখি ।





















Comments

Popular Posts