আমি
আমি
দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী
আমি গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে এক স্বপ্নময় জগত এ প্রবেশ করেছি,
যেখানে বর্তমান,অতীত ও ভবিষ্যৎ এক সরলরেখায় অবস্থান করে ।
যেখানে আমাকে দিতে হল না প্রত্যেক দিনের কর্তব্য আর নিষ্ঠার পরীক্ষা,
আজ আমি নিরপেক্ষ এক দর্শকের মতন এক বঞ্চিতা নারীর জীবনের
হিসেবের খাতাটা তুলে নিয়েছি নিজের হাতে ।
ঘড়িতে ঢং ঢং ঢং করে তিন বার শব্দ হল ,রাত তিনটে বাজল,
সদ্যজাত শিশুর কান্নার শব্দ শুনে ছুটে গেলাম লেবার রুমে ।
এ কাকে দেখলাম আমি ? এ তো আমি ।
রক্তাক্ত আমি হাত পা ছুড়ে কাঁদছি, না এতো শুধু কান্না নয়
অভিযোগ জানাচ্ছি, কিন্তু কার প্রতি এতো অভিযোগ ?
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম এইযে, আমি , কার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ ?
হাত পা ছুড়ে তাড় স্বরে চিৎকার করে কি যে বলল, বুঝলাম না ।
একটু সামনের দিকে এগোতেই দেখলাম বাড়ীর উঠনে জ্বলছে বেশ কয়েকটি বই
একটা ফ্রক-পড়া ১২ বছরের মেয়ে দাড়িয়ে দেখছে,
অন্ধকারে মুখটা স্পষ্ট দেখতে পারছি না, সামনে যেতেই থমকে গেলাম ,
যখন দেখলাম এতো আমি ।
জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে ?
বলল, বাবা আদর করে আঁচড়ে দিয়েছে, প্রতিবাদ করতেই
আমার পড়ার বই গুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে ।
আরোকটু এগোতেই দেখলাম একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে
একটা পেট উঁচু রোগা মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে সিলিং ফ্যানে দড়ি ঝোলাচ্ছে;
বললাম এই কি করছ , দাড়াও ।
মেয়েটি উত্তর দিল, সাত মাসের আমি অন্ত সত্তা, স্বামী পনের টাকা পুরো পায়নি,
তাই যে আমার এই অবস্থা ।
গলার আওয়াজটা খুব চেনা,
হু বুঝলাম ।
খুব ক্লান্ত লাগছে, সামনে একটা বড় গাছ দেখা যাচ্ছে,
তার নীচে বসে কেউ কিছু ভাবছে ।
আমি বললাম আমি তৃষ্ণার্ত,
সে আমাকে বলল, আমি নিজেও তৃষ্ণার্ত,
তোমার তৃষ্ণা কি করে মেটাব ?
বিরক্ত হয়ে বললাম আরে আবার আমি ,
বললাম এত সমস্যা কেন তোমার জীবনে ?
সে উত্তর জানব বলেই তোমার অপেক্ষায় বসে যে ।
জীবনের কার্য,কারণ কোন উত্তর যে আমার কাছে নেই,
যার দেবার সে যে সে নিজেই পঙ্গু হয়ে বসে হাসছেন ।
Comments
Post a Comment